প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০০:২৬
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আপনারা গিলে ফেলেছেন, আ.লীগকে ফখরুল
সরকার দেশের অর্থনীতিকে ‘ঝাঁঝরা’ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি’— প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাননি, গিলে ফেলেছেন। গোটা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আপনারা গিলে ফেলেছেন।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ওরা (সরকার) খুব কঠিন অবস্থায় পড়েছে। ওই যে বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ, তখন বড় বড় কথা বলতো- ‘আমাদের সরকারের আমলে রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার আছে’। তো সেই রিজার্ভটা এখন গেলো কোথায়? আমি যখন এ কথা বলেছি তখন প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত রাগান্বিত হয়েছেন, রাগান্বিত হয়ে বলেছেন, ‘আমরা কি ওটা চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়েছি’। আমি উত্তরে বলেছি চিবিয়ে তো খান নাই, গিলে খেয়েছেন। গোটা বাংলাদেশের অর্থনীতিটা আপনারা গিলে খেয়ে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, সর্বভুক এরা (সরকার)। আজকে বাংলাদেশকে তারা (সরকার) এখন ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের হাত থেকে যদি দেশকে সরানো না যায় তাহলে বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ জোগানের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা তো জানি, যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তার পেমেন্ট হয় এই রিজার্ভের তহবিল থেকে। আমরা যে ঋণ নেই সেই ঋণের পরিশোধ হয় রিজার্ভের টাকা থেকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গতকাল বললেন যে, পায়রা বন্দরে খরচ হয়েছে। আমরা জানতে চাই, কীভাবে রিজার্ভ থেকে এই টাকা খরচ হলো? কারা খরচ করলো, কাদেরকে দিয়ে করালেন? রিজার্ভের টাকার কীভাবে গেলো?
তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই। জাতীয় নির্বাচন তো পরে। আগে একে (আওয়ামী লীগ সরকার) বিদায় করতে চাই। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। আমাদের পরিষ্কার কথা- এই সরকারকে চলে যেতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে, সংসদটাকে বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) পদত্যাগ করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সংসদ বিলুপ্ত হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হচ্ছে- ততক্ষণ পর্যন্ত এদেশের মানুষ বসে থাকবে না। তারা লড়াই করবে, সংগ্রাম করবে, আন্দোলন করবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে জনগণ এদেরকে পরাজিত করবে। তরুণ-যুবক সমাজকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে সবাইকে গণআন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির সভা-সমাবেশে যেভাবে বাধা দিচ্ছে তাতে সহজেই অনুমান করা যায় আগামী বছর দেশে একটা গৃহযুদ্ধ হবে। যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সেই গণতন্ত্র আজ আবার বিলীন হয়ে গেছে। দেশে আইনের শাসন নাই। সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার নাই। কী জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? এত বছর পরে আবার গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি জেগে উঠেছে। অসংখ্য তরুণের পদধ্বনিতে গ্রাম-গঞ্জ কেঁপে উঠছে। আমার মনে কোনো সন্দেহ নাই যে আগামী বছর নির্বাচনে বিএনপি আবার জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আপনাদের ওপর কিসের আস্থা রাখবো? একটা প্রকল্প ১৩ বছর ধরে করছেন শেষ হয় না। আপনার নিজের ভাই আপনার ওপর আস্থা রাখে না। আপনাদের ওপর কিসের আস্থা রাখবো। আপনি ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন না ‘মাসুদ ভালো হয়ে যাও’। আপনাকে বলছি কাদের ভাই এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যান। ভালো হতে পয়সা লাগে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান ও জ্যেষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিলনের যৌথ সঞ্চালনায় এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য ইশরাক হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর, কেন্দ্রীয় নেতা মুরাদ হোসেন, মোকসেদ আলী মঙ্গলীয়া, আবদুল হালিম, শরীফ হোসেন, খালেদা আখতার, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের রায়হান আল মাহমুদ, ইব্রাহিম হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।