প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪৫
‘চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব’
চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভা মনে করে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করা হলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় হওয়ার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সভা মনে করে যেহেতু নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে সেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণ নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্ন ওঠে না। ২০২৫ সালের জুলাই মাসের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। সভা এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসার আহ্বান জানায়।
তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি যে, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট বিষয়। আমরা মনে করি যে, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ কারণে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাতে চাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকেও আহ্বান জানাচ্ছি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি– দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার যে বক্তব্য ছিল– এ বছরের শেষের দিকে অথবা আগামী বছরে অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গতকাল (সোমবার) দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে এবং মোটামুটি একটা স্ট্যাবিলিটি এসেছে, সেক্ষেত্রে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মনে হয় যে আগামীকাল (বুধবার) সংস্কার সংক্রান্ত কমিশনের রিপোর্ট এসে যাবে। সুতরাং মনে হয় না আরও বিলম্বিত করার কোনো কারণ আছে। যত বিলম্ব হচ্ছে ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আগে সংসদ নির্বাচন চাই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ এখন পুরো দেশের, জাতির ফোকাসটা হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপরে।
তিনি বলেন, ক্রাইসিসটা ওই জায়গায়– গত তিনটা জাতীয় নির্বাচন হতে পারেনি, মানুষ সেজন্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সেটাকে পূরণ করতে চায়। আপনাদের বুঝতে হবে লোকাল গভর্মেন্ট দেশ চালায় না, দেশ চালায় কিন্তু জাতীয় সংসদ। আইন প্রণয়ন করে জাতীয় সংসদ, গণতন্ত্রের মূল বিষয়টা হচ্ছে জাতীয় সংসদ। এটা কার্যকর হলে গণতন্ত্র ফাংশনাল হয়।
নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের জন্য কতগুলো ফরমালিটিজ আছে যেমন ভোটার লিস্ট। এই ভোটার লিস্ট রেডি, ভোটার লিস্টের জন্য বেশি দিন লাগার কথা নয়, এক মাসের মধ্যেই যদি কেউ হালনাগাদ করতে চায় সেটা করতে পারবে। এরপরে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজে এক-দুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সবই তো তৈরি।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে যে নির্বাচন করার জন্য আমরা রেডি এবং তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য তৈরি আছে। তারা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে যে দুইটা নির্বাচন একসঙ্গে সম্ভব না। সুতরাং জাতির স্বার্থে প্রয়োজন সংসদ নির্বাচন।
তিনি বলেন, এরকম ক্রিটিক্যাল সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচন করার চিন্তাটা আসে কোত্থেকে? নির্বাচন পেছানোর চিন্তাটাই আসে কোত্থেকে? কারণ এটা তো আপনার প্রথম কাজ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। আমরাই তো সংস্কার আগে তৈরি করেছি, আগে জাতির কাছে উপস্থাপন করেছি। সেই ২০১৬ সালে আমরা ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছি, ২০২৩ সালে ৩১ দফা দিয়েছি। আমরাই তো সবচেয়ে বেশি সংস্কার করেছি।