প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০১
বুয়েটে বৈচিত্র্যময়-সৃষ্টিশীল ছাত্ররাজনীতি চালু হবে : ছাত্রলীগ সভাপতি
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের অবৈধ আদেশ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করলে, মহামান্য আদালত তা বাতিল করে দেন। ফলে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি পরিচালনা করতে আর কোনো বাঁধা নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী আধুনিক, স্মার্ট ও পলিসি নির্ভর নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর আলোকপাতের উদ্দেশ্যে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সাদ্দাম বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গভীরভাবে মনে করছে, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন। বর্তমানে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি পুনরায় শুরু হবে। কিন্তু সেটি কোন ছাত্ররাজনীতি তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এই রাজনীতি অবশ্যই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, সেশনজট, র্যাগিং-বুলিং, দখল-বাণিজ্য, হত্যা-সন্ত্রাসের ছাত্ররাজনীতি নয়। এই ছাত্ররাজনীতি হবে আধুনিক, যুগোপযোগী, বৈচিত্র্যময়-সৃষ্টিশীল, জ্ঞান-যুক্তি-তথ্য-তত্ত্বনির্ভর।
তিনি বলেন, প্রথাগত ছাত্র রাজনীতিতে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া নেতৃত্বের মাধ্যমে বুয়েট শিক্ষার্থীরা পরিচালিত হবে না। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। যে নেতৃত্ব হবে আদর্শিক, দেশাত্মবোধসম্পন্ন এবং যে নেতৃত্ব বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকেই তৈরি করবে বিশ্বসেরা উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা। বুয়েটে আগামী দিনে এমন ছাত্ররাজনীতি পরিচালিত হবে যা প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বুয়েট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার নামে ব্রেইন চেইন বন্ধ করবে। বুয়েটে এমন ছাত্ররাজনীতি পরিচালিত হবে যা শহীদ শাফী ইমাম রুমীর মতো বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ত্যাগ করে দেশের জন্য হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করতে শেখাবে, কিংবা উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে এসে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়তে নৈতিকভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে এনেই কেবল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার দায়িত্ব শেষ করবে না। দেশরত্ন শেখ হাসিনার পরিকল্পিত আগামী দিনের উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নত ও স্মার্ট ছাত্ররাজনীতি উপহার দেওয়ার জন্য মডেল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটকে গ্রহণ করবে। এই ঐতিহাসিক যাত্রায় বুয়েটের সব শিক্ষার্থীকে সহযোগিতার সংকল্প নিয়ে পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রগতিশীল সব ছাত্র সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, আসুন গৎবাঁধা ধারা বাদ দিয়ে আধুনিক, উন্নত ছাত্ররাজনীতির চর্চা শুরু করুন বুয়েট থেকেই। সুন্দর, স্বনির্ভর, সম্মানজনক ভবিষ্যৎ গড়তে আজকের প্রজন্ম আর কালক্ষেপণ করবে না, এটিই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আহ্বান।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর উপর আপনারা সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল। ৭ অক্টোবর ২০১৯ বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার নৈতিক ও সাংগঠনিক অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র রাজনীতির নামে এমনকি ছাত্রলীগের দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে জিয়া-এরশাদ-খালেদা-নিজামী প্রবর্তিত হত্যা-খুন-সন্ত্রাস পরিচালনা করা যে কোনমতেই সম্ভব নয়, সেটি এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু দেশরত্ন শেখ হাসিনা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করেছেন, আবরারের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, প্রশাসন বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতীতেও সমর্থন করেনি, বর্তমানেও করে না।
আবরার ফাহাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বারংবার বলার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশের মহান সংবিধান ও বুয়েট আইন কোনটিই ছাত্র রাজনীতি বন্ধের এই সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেয় না। বুয়েট পরিবারের অংশিজনদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আহবান জানিয়েছে- ‘ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সুজন-বেদন।’ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পর পাঁচ বছর অতিক্রম হয়েছে। এসময়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নামে সেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বিশ্ব মানবতা বিরোধী মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ তাদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে খুঁটি গেড়ে বসেছে, বাঙালির মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসকে অবজ্ঞা করা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্মরণ করতে বাধাদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পরিকল্পিত উন্নত-আধুনিক বাংলাদেশে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বোপরি আমাদের সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতি কোনভাবেই পশ্চাৎপদ ধারায় পরিচালিত হতে পারে না। এবং আধুনিক নিয়মতান্ত্রিক ধারার ছাত্র রাজনীতির সূচনা যে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েট থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে, বুয়েটের শিক্ষার্থীরাই যে সমগ্র ছাত্র রাজনীতিকে খোলনলচে বদলে যাবার পথ দেখাতে যাচ্ছে, আজ সেই শুভ উপলক্ষ্যের উদ্বোধন। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ র্যাংকিংধারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি কিভাবে পরিচালনা হয় তা থেকে আইডিয়া নিয়ে, নিজেদের চর্চায় সেটি নিয়ে বুয়েট আমাদের ছাত্র রাজনীতিকে পথ নির্দেশ করবে।
এ সময় তিনি বুয়েটে কিছু কর্মসূচী ঘোষণা করেন। কর্সূচিগুলো হলো-
১. ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর আবাসিক হল ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বুয়েট শহিদ মিনারে অবস্থান;
২. আধুনিক, স্মার্ট, পলিসি নির্ভর নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সাথে মতামত আহ্বান ও আলোচনা:
৩. সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গী কালোছায়া থেকে বুয়েটকে মুক্ত করতে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন ; এবং
৪. বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনের সাথে আলোচনা
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত সহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।