রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে

প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৬

বিএনপি-জামায়াত ভোট কেড়ে নিতে চায় : শেখ হাসিনা

বিএনপি-জামায়াত ভোট কেড়ে নিতে চায় : শেখ হাসিনা
অনলাইন ডেস্ক

সবাইকে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ভোট কেড়ে নিতে চায়। সবাই পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সেটার জবাব দেবেন।

সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করছে, এটাই তো স্বভাবিক। কারণ ভোট চুরি করতে পারবে না, তাই নির্বাচন করে না। ভোট চুরি করাই তো তাদের অভ্যাস। নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস তাদের নেই। এটা পারবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি রেললাইন তুলে নেয়, আগুন দেয়। এদের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। এরা দেশকে ধ্বংস করতে চায়। আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে ভোট কেড়ে নিতে চায়। সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সেটার জবাব দেবেন। কেউ যাতে আপানাদের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে।

এসময় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ টা রত্ন আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। তারা আপনাদের সেবা করবে। এ নৌকা নূহ নবীর নৌকা, মহাপ্লাবনে মানুষকে রক্ষা করেছে। এ নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ পাবেন। ভোট শুধু দেবেন না, ভোট রক্ষাও করবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে হতদরিদ্র ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমেছে। আরও কমাবো। প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। বিদেশে পড়ার জন্যও বৃত্তি দিচ্ছি। বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। একটা দেশের মানুষের সব ধরনের কল্যাণ আওয়ামী লীগ করে। আজকে সেটাই প্রমাণ হয়েছে। এর আগে জিয়া খালেদারা তো ছিল। তারা তো জনগণকে কিছু দেয়নি। কিন্তু নিজেরা অর্থসম্পদশালী হয়েছে। বিটিভিতে দেখতাম, জিয়াউর রহমান নাকি কিছুই রেখে যায়নি। ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গিয়েছিলেন। পরে দেখলাম হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। তাহলে ভাঙা সুটকেস কি যাদুর বাক্স হয়ে গেলো? কীভাবে এলো এত টাকা? আসলে তারা ক্ষমতায় এসে নিজেরা সম্পদের মালিক হয়েছে, মানুষের জন্য কিছু করেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, গুলিস্তানে আগুনে পোড়া মার্কেটের জায়গা বহুতল ভবন করে দেবো। আমাদের লক্ষ্যই মানুষের উন্নয়ন। ৩০০ বস্তিবাসীকে ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। পরিচ্ছন্নকর্মীদেরও ফ্ল্যাট করে দিয়েছি। হরিজন ও দলিত শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে ভালোভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেবো।

তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে ঢাকার পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করেছি। যানজট নিরসনে মেট্রোরেলসহ নানা প্রকল্প নিয়েছি। বিভিন্ন ফ্লাইওভার ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে সড়কের উন্নয়ন করেছি। নদীর নাব্য রক্ষা এবং ঢাকার চারপাশের নদীর তীরে হাঁটার পথ করে দিয়েছি। বিভিন্ন হাসপাতাল নির্মাণের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা সহজ করেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজকে নতুনভাবে গড়ে তুলবো।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা ঘিরে ওয়াটারওয়ে তৈরির ব্যবস্থা করে দেবো। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার করে দিয়েছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পাই, চুরির প্রয়োজন হয় না। তারা (জিয়া-এরশাদ) ভোট চুরি করে, এটা আমার কথা না। হাইকোর্টের রায় আছে— জিয়ার ক্ষমতা দখল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ।

বক্তব্যের শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, নতুন বছরে (২০২৪) পদার্পণ করলাম। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা ক্ষমতায় এসেছিল অস্ত্রহাতে নিয়ে। মানুষের ভাগ্য গড়েনি। এই দেশটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। যে জয় বাংলা স্লোগানে দেশের মানুষ তাজা রক্ত দিয়েছিল, সেটিও নিষিদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন বাংলাদেশে ফিরে আসি, আমার ফেলে রাখা আপনজনদের পাইনি। পেয়েছি, হাজার হাজার মানুষ। সেদিন ঘোষণা দিয়েছিলাম, এ বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। তাদের মধ্যেই আমি খুঁজে পাবো, বাবা-মা ভাইবোনের স্নেহ। হ্যাঁ, এটা পেয়েছি। একটা প্রত্যয় ছিল, সবার মুখে খাদ্য তুলে দেবো। কেউ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। সবাইকে উন্নত জীবন দেবো। ক্ষমতায় এসে সেই কাজ শুরুও করেছিলাম। কিন্তু গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি।

তিনি বলেন, তবে দুর্নীতির কারণে ২০০৮ সালে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা ২৩৩ আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছি। ২০১৩-১৪ সালে আগুনে মানুষ পুড়িয়েছে, কিন্তু নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। তারেক জিয়া দেয় নমিনেশন, গুলশান থেকে ফখরুল দেয় নমিনেশন, পল্টন অফিস থেকে রিজভী দেয়। ওইভাবে নমিনেশন বিক্রির ফলে তাদের নির্বাচন ভেস্তে যায়। দোষ দেয় আমাদের ওপর।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অথচ আওয়ামী লীগ ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা অত্যাচার সয়েছে, জেল খেটেছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে।

এর আগে বিকেল সোয়া ৩টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কলাবাগান মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় পৌঁছান শেখ হাসিনা। এসময় স্লোগান স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশের পতাকা হাতে স্লোগানের জবাব দেন তিনি। পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান পৃথকভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর চলে বক্তব্যের পালা। ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে একে একে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

এসময় ঢাকার আসনগুলোর দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়