প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৪৮
জনগণই খালেদাকে বারবার ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী
সব নির্বাচনের আগেই ষড়যন্ত্র হয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছি। টানা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশ উন্নত হয়েছে। মাত্র তো ১৫ বছর একটানা সময় পেলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটে জিতে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেছি।
২০০৯ থেকে আজ ২০২৩, অথচ এই সময়ের মধ্যে আজ বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে একসময় হেয় করা হতো, পাকিস্তানিরা বোঝা মনে করত, তারাই এখন বলে আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। আমরা বাংলাদেশের মতো উন্নত হতে চাই।’
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আয়োজিত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, ‘এরা পরাজিত শক্তির দালাল, এদের না বলুন। এদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কেউ যদি জনগণের জন্য আন্দোলন করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে...তারা নাকি গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছে...আরে তারা গণতন্ত্র বানান করতে পারে ঠিকমতো? তারা কী গণতন্ত্র শিখেছে? তারেকের বাবা দেশে কী গণতন্ত্র দিয়েছিল? তার তো ছিল কারফিউ গণতন্ত্র। কারফিউ দিয়ে সে ক্ষমতায় বসেছিল।
লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় বসেছিল তারেকের বাবা। আর ওর মা এসে যত যুদ্ধাপরাধীদের গদিতে বসিয়েছিল। তার খেসারতও তাকে দিতে হয়েছে। জনগণই তাকে বারবার ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছে। আর এখন তারেক দূরে বসে হুকুম দিয়ে দেশে মানুষ পোড়ায়।
সব থেকে বড় কথা, তারা এখন মানুষ মারার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।’ বিএনপির সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা বলেছিল আওয়ামী লীগ আগামী ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। সে কারণেই গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আর আজ খালেদা জিয়ার সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাচ্ছে তার ছেলে। যেমন জিয়াউর রহমান, তেমন খালেদা জিয়া আর ছেলেও তেমন একটা অমানুষ পয়দা করেছে। যে রাজনীতি আর করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে বিদেশ চলে যায় এখন সে সেখানে বসে হুকুম দিয়ে দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’
জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে বাস আছে, রেললাইন আছে, যেখানে এ রকম (রেলপথ তুলে ফেলা) ঘটনা ঘটবে, সাথে সাথে জনগণ যদি মাঠে নামে এরা হালে পানি পাবে না। এরা ধ্বংস করতে পারে, এরা মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না। এরা মানুষকে খুন করতে পারে, কিন্তু মানুষের জীবনের শান্তি নিরাপত্তা দিতে পারে না। এরা মানুষের সর্বনাশ করতে পারে, মানুষের জীবনটা উন্নত করতে পারে না। কাজেই তাদের কাছ থেকে সাবধান।’
নিজের কষ্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম। আমরা তখন দেশে আসতে পারিনি। আমাকে শরণার্থী হয়ে থাকতে হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগ যখন আমাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে তখন আমি অনেকটা জোর করে দেশে ফিরে আসি। অনেকের ধারণা ছিল আমি দেশে আসতে পারব না। কিন্তু আমি আর আমার বোন রেহানা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের যেতে হবে। আমার বাচ্চাদের দায়িত্ব রেহানা নিল। দেশে ফিরে আমার একটাই লক্ষ্য ছিল―মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা। আমি আমাদের দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, যা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল। জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে, এটাই ছিল আমার লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র তিন বছর সাত মাস সময় পান। এর মধ্যেই দেশটাকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি জাতিসংঘ কর্তৃক আদায় করেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নতিটা আমাদের স্বাধীনতাবিরোধীরা ভাবতেও পারেনি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতির সভাপতিত্বে স্মরণসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।