প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ২১:৫৬
‘রাজনৈতিক দলগুলো গরিবের পেটে লাথি মারছে’
‘চার বছর ধরে বাস টার্মিনালে ঘুরে ঘুরে চা-পান বিক্রি করি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একদমই বেচাকেনা নেই। হরতাল-অবরোধে টার্মিনালে দূরপাল্লার যাত্রী নেই। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কথা বলে খেটে খাওয়া মানুষের পেটে লাথি মারছে। তারা সবাই নিজ নিজ স্বার্থের জন্য রাজনীতি করেন।’
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে এসব কথা বলেন চা-পান বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, সকালে টার্মিনালে গেলে দিন শেষে সাত থেকে আটশ টাকা বিক্রি করতে পারি। লাভ হয় মাত্র দেড় থেকে ২০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে চলবো কীভাবে, গ্রামে সংসার চালাবো কেমনে। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি।
আনোয়ার বলেন, আগে দিনে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা করতে পারতাম। কিছু সময় তিন হাজার টাকাও বেচাকেনা হতো। তখন গড়ে ৮০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়েছে। এখন বেচাকেনায় মন্দা চলছে। মেসের খাবার খরচ দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে গতকাল ও আজ তৃতীয় দফায় বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলছে। এ অবরোধের কারণে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মাঝে মধ্যে এনা পরিবহনের ময়মনসিংহগামী কিছু বাস গন্তব্য ছেড়ে যাচ্ছে আসনের অর্ধেকের কম যাত্রী নিয়ে।
এনা পরিবহনের কাউন্টারের উত্তর পাশে আনারস, পেয়ারা কেটে লবণ, মরিচ গুঁড়া মিশিয়ে ১০ ও ২০ টাকা প্লেট বিক্রি করছেন নয়ন মিয়া। আলাপকালে বলেন, আগে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত টার্মিনালে যাত্রী গমগম করতো। বেচাকেনায় পাঁচ মিনিটও বিরতি ছিল না। এখন ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই মালামালও কম কিনি, কম বিক্রি করি।
সকাল ১০টায় মহাখালী টার্মিনালের ভেতর যাত্রীদের বসার বেঞ্চে শুয়ে ছিলেন কুলি নিজাম উদ্দিন। পাশে বসে গল্প করছিলেন সুপার ডিলাক্সের চালকের সহকারী জয়নাল।
আলাপকালে নিজাম বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে মহাখালী সাততলা বস্তিতে থাকেন। সংসারে তার চার বছরের এক মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলে রয়েছে। প্রতি মাসে সংসার খরচ চালাতে তার ১৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়।
তিনি বলেন, আগে কুলির কাজ করে দিনে ৭ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারতেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে টার্মিনালে যাত্রী না থাকায় কুলির কাজ নেই। তারপর কাজের আশায় র্টার্মিনালে বসে আছি।