প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৫৮
গণতন্ত্রের ছবকদাতারা নিশ্চুপ কেন, প্রশ্ন তথ্যমন্ত্রীর
যারা কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয় এবং মানবাধিকারের কথা বলে- ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় তারা এখন নিশ্চুপ কেন, এমন প্রশ্ন তুলেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাতে সংসদ অধিবেশনে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। এর আগে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব তোলেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েল ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করে। সেই হামলায় এখন পর্যন্ত আট হাজারের বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। প্রতিমুহূর্তে মানুষ মারা যাচ্ছে। নিহতদের মধ্যে তিন হাজারের বেশি শিশু এবং দুই হাজারের বেশি নারী রয়েছেন। অর্থাৎ, নারী ও শিশুরাই হত্যাকাণ্ডের শিকার বেশি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গাজায় লাখ লাখ মানুষ বস্তুচ্যুত হয়েছে। এমনকি সেখানে হাসপাতালগুলোও হামলা থেকে রেহাই পায়নি। সেই হামলায় অনেকে মারা গেছেন।
চলতি মাসের মাঝামাঝি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরায়েল সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম- পৃথিবীর একটি শক্তিধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান (বাইডেন) সেখানে (ইসরায়েল) গেলেন। সেখানে গিয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর (বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) সঙ্গে কোলাকুলি করলেন। সেই রাষ্ট্রপ্রধান হামাসের নিন্দা করলেন, কিন্তু গাজায় হাসপাতালে হামলা ও নারী-শিশু হত্যার নিন্দা তিনি করলেন না।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গাজায় হাসপাতালে হামলার পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল করা নিষিদ্ধ করেছে। তারা বারবার মুক্ত গণমাধ্যম, মুক্তমত এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে। সেখানে ফ্রান্সের আইনমন্ত্রী এক ধাপ বাড়িয়ে বলেছেন যে, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বললে সেটি আইনগত অপরাধ বলে গণ্য করা হতে পারে। অথচ তারাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে। মাঝে মাঝে আমাদের মতো দেশগুলোকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে তারা প্রেসক্রিপশন দেয়।
ড. হাছান বলেন, অথচ এসব দেশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল করেছে। যুক্তরাজ্যে এক লাখ মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে সমাবেশ করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় হাজারো মানুষ প্রতিবাদ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনের কাছে মানুষ চিঠি লিখে জানতে চেয়েছে, ‘আমাদের ট্যাক্সের টাকা তুমি কেন ইসরায়েলকে দিচ্ছো।’ আমার একই কথা- যারা গণতন্ত্রের ছবক দেয়, মানবাধিকারের কথা বলে তারা ফিলিস্তিনের ওপর নির্যাতনের সময় এখন নিশ্চুপ কেন, কেন তারা কোনো বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না।
হাছান মাহমুদ বলেন, ফিলিস্তিনে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। গাজার বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের গায়ে নাম লিখে রাখছেন, যেন মারা গেলে সন্তানকে শনাক্ত করা যায়।
বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যারা নির্বাচন এলে ইসলামের কথা বলে, ‘আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই’ বলে স্লোগান দেয়, তারা তো আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। তারা আসলে ভোট এলেই কড়া মুসলমান সাজে। আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে ইসলাম চলে যাবে বলে ধোয়া তোলে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ’র এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদি নিজে গণমাধ্যমের সামনে শিকার করেছে সে শুধু আসলাম চৌধুরী নয়, তারেক রহমানের সঙ্গেও মিটিং করেছে। বিএনপি-জামায়াত আজ ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে, ইহুদিদের পক্ষ নিয়েছে। এরা মানবতার শত্রু। শুধু ইসরায়েল বা নেতানিয়াহু নয়, বিএনপি-জামায়াতও আজ নিজেদের মানবতার শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েল গাজার হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। সেটির বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কোনো কথা বলেনি। বরং তার অনুকরণে তারা বাংলাদেশে পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিবাদের কথা তুলে ধরে ড. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরব বিশ্বের রাষ্ট্রদূতেরা দেখা করেছিলেন। কারণ, তারা জানেন- মুসলিম বিশ্ব এবং বিশ্ব সংকটের সময় শেখ হাসিনা সমাধান দিতে পারেন। মজদুর এবং জুলুমের শিকার মানুষের পাশে দাঁড়ান। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং তার পরামর্শ নেন।