প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ২৩:৫৮
বিচার বন্ধের কথা না বলে বিবৃতিদাতাদের এক্সপার্ট পাঠাতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচার বন্ধের কথা না বলে বিবৃতিদাতা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশে এক্সপার্ট পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিবৃতি না দিয়ে তারা এক্সপার্ট পাঠাক। যদি এতই দরদ থাকে তারা ল’ইয়ার (আইনজীবী) পাঠাক। মামলার সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুন। তারাই দেখে বিচার করে যাক এখানে কোনও অপরাধ আছে কিনা। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে মন্তব্য করে ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভদ্রলোকের এতই যদি আত্মবিশ্বাস থাকতো যে তিনি কোনও অপরাধ করেননি, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকা সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।বিকালে গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব কিছু একটি আইন মতো চলে। কেউ যদি এখন ট্যাক্স না দেয়, আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, আর শ্রমিকদের পক্ষ থেকে লেবার কোর্টে (শ্রম আদালত) যদি মামলা করা হয়, তা আমাদের কি সেই হাত আছে যে মামলা বন্ধ করে দেবো? আপনারা বিচার করেন। একটা চলমান মামলা। আমাদের দেশে তো চলমান মামলা নিয়ে আলোচনাই করি না। কারণ এটা সাবজুডিস। যে বিষয়টি সাবজুডিস হিসেবে নিজের দেশে গণ্য করা হয়, সেখানে বাইরের থেকে বিবৃতি এনে মামলা প্রত্যাহার…। তা আমি কে মামলা প্রত্যাহার করার। এখানে আমার কোন অধিকারটা আছে বলেন। সেই পাওয়ারটা দিয়েছেন আমাকে? জুডিসিয়ারি তো সম্পূর্ণ স্বাধীন। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি আরেকটিকে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
তিনি বলেন, তারা বিবৃতি দিয়ে কীভাবে মামলা তোলাবে সেটা আমি নিজেও জানি না। যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাদের আহ্বান করি, আপনারা এক্সপার্ট পাঠান—তাদের যদি এত দরদ থাকে তারা ল’ইয়ার পাঠাক। ওখানে বসে বিবৃতি না দিয়ে তারা এক্সপার্ট পাঠাক তাদের ক্লায়েন্টের জন্য। সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুক। সব দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখুক সেখানে কোনও অন্যায় আছে, না অন্যায়ভাবে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদের এসে দেখা দরকার এখানে কী কী অসামঞ্জস্য আছে। তারাই দেখে বিচার করে যাক এখানে কোনও অপরাধ আছে কিনা। আমি মনে করি—এটা একবার পাঠালে অনেক কিছুই বের হবে। নয়তো আমাদের দেশের আইন আছে আদালত আছ। ল উইল টেক ইটস ওন কোর্স। এটা সাফ কথা।
বিশ্বনেতৃবৃন্দের বিবৃতিতে বিচার প্রভাবিত হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আদালত প্রভাবিত হবে কিনা? আদালত স্বাধীনভাবেই কাজ করবে। কে বিবৃতি দিলো না দিলো সেটা আদালতের দেখার দরকারটা কী? আদালত এতে প্রভাবিত হবে কেন? তারা স্বাধীনভাবে চলবে। তাদের ভয় পেলেও তো চলবে না। আদালত ন্যায়বিচার করবে। লেবারদের (শ্রমিক) যেটা পাওনা সেটা তো তাদের দিতে হবে। অল্প কিছু দিয়ে বাকিটা ঘুষ দিয়ে বন্ধ করা এটা কী খুব ন্যায়ের কাজ? সততার কাজ? আমার সেটাই প্রশ্ন। এত লম্বা লম্বা বড় বড় কথা আর মাঝখান থেকে লেবারদের অর্থ আত্মসাৎ। চমৎকার বাংলাদেশের ‘লোক’। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও একেবারে লাফ দিয়ে পড়লেন। আর প্রতিদিনই আমাদের লেবার নিয়ে জর্জরিত করে দেয়—এটা হলো না বলে। আইএলও’র প্রতিটি প্রটোকল আমরা সই করেছি। যারা প্রশ্ন তোলেন তারা একটার বেশি কেউ করেনি।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, লেবারের অধিকার নিয়ে তো আমাদের অনেক কথা শুনতে হয়। আমাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইএলওতে শুধু নালিশ আর নালিশ। অথচ যারা লেবারের অর্থ- আইনে আছে লাভের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণে দিতে হবে। কেউ যদি সেটা না দেয় আর লেবাররা মামলা করে- মামলার কারণে তাদের যদি চাকরিচ্যুত করা হয়, সেটার জন্য যদি তারা আবার মামলা করে সে দায় তো আমাদের নয়। আবার এই মামলা যাতে না হয় তার জন্য ঘুষ দেওয়া.. নেতারা যে ঘুষ খেয়েছে সেটা ধরাও পড়েছে এবং সেই টাকা ব্যাংকে ফ্রিজ করা হয়েছে।
মামলায় সরকারের কোনও হাত নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মামলা তো আমরা করিনি। মামলা করেছে… এখানে ট্যাক্স ফাঁকির বিষয়। ট্যাক্স ফাঁকিতে কেউ যদি ধরা পড়ে তাকে তো ট্যাক্স ফেরত দিতে হবে। তিনি তো যথাযথভাবে ট্যাক্স ফেরত দিচ্ছেনও। এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) থেকে বলেছে—প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয়ে আছে। এখন স্বাভাবিক সারা বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক একটা চাপ, কাজেই যেখানে যেখানে সরকারের পাওনা সেটা আদায় করতে হবে। এনবিআর যদি সেই অর্থগুলো, আদালতে যেটা স্থগিত। তা স্থগিত হবে কেন? ট্যাক্স দেওয়াটা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। সেটা আমেরিকা বলেন, ইংল্যান্ড বলেন, ইউরোপ বলেন, সে দেশের নাগরিকরা যদি ট্যাক্স ফাঁকি দেয় তাহলে কী তাদের সরকার তাদের কোলে তুলে নাচে? নাকি তাদের কাছ থেকে মামলা… ফিলিপাইনে নোবেল লরিয়েট, তার বিরুদ্ধে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার মামলা। দিনের পর দিন সেই মামলায় তাকে লড়তে হয়েছে। এরকম বহু নোবেল লরিয়েট পরবর্তীতে অনেক কাজের জন্য কারাগারে আছেন।
একটি ব্যাংকের এমডি চাকরি করে বিলিয়ন ডলার কীভাবে বিদেশে বিনিয়োগ করেন সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ব্যাংকটি কিন্তু সরকারি। সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান—গ্রামীণ ব্যাংক। এর এমডি বেতন তুলতেন সরকারি বেতন। সরকারি বেতনভুক্ত একজন ব্যাংকের এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কীভাবে বিনিয়োগ করেন আর বাণিজ্য করেন। এই শত জ্ঞানী যারা বিবৃতি দিলেন তারা এই কথাটা কী একবারও জিজ্ঞাসা করেছেন যে ব্যাংকে চাকরি করে কীভাবে বিদেশে এত টাকা বিনিয়োগ করলেন? ব্যবসা করলেন? আসা-যাওয়া করেন। এত কিছু করেন কোনও নিয়ম নেই। কেউ কী খোঁজ নিয়েছেন? এত টাকা কোত্থেকে এলো। এত টাকা পেলো কোথায়? কীভাবে এই টাকাটা উপার্জন করলেন। আপনারা কেউ কী জিজ্ঞাসা করছেন? কেউ করেননি? আপনারা করেন। আমাদের কোনও রাজনীতিবিদ এটা করলে তো কীভাবে লিখতেন। লিখতে লিখতে কলম শেষ হয়ে যেতো। দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সবাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলছেন। এখন দুর্নীতিবাজ ধরা পড়লে, পছন্দের হলে তার কোনও দোষ নেই! আর অপছন্দের হলে তাকে ভালো করে আচ্ছামতো... এই তো অবস্থা আমাদের।