প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:৫৩
বিএনপি জঙ্গিগোষ্ঠীকে উসকানি দিচ্ছে: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আজ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন ও শান্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জঙ্গিগোষ্ঠীকে উসকানি দিচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে সেই উসকানিরই প্রতিফলন ঘটেছে।’
বুধবার (২৩ আগস্ট) আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি। এতে জঙ্গিবাদ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘হাস্যকর ও নির্লজ্জ’ বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নিয়ে যে মিথ্যাচার করেছে, তা দেখে দেশের বিবেকবান মানুষ লজ্জা পেয়েছে। বিএনপি মহাসচিবের দেওয়া ‘ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বকে দেখাতে সরকার দেশে “অগ্নি নাটক” করছে’, এই বক্তব্য দেশবাসীর সঙ্গে বিএনপির চরম উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তাদের কাছে জঙ্গি দমনের প্রচেষ্টাকে নাটক মনে হবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, বিএনপির মদতেই পরিচালিত হচ্ছে জঙ্গিবাদী সংগঠনের নেটওয়ার্ক। বিএনপির সহায়তা, প্রত্যক্ষ মদত ও পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশে উগ্র-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ভয়াবহ উত্থান ঘটে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য। কুখ্যাত জঙ্গি নেতা শায়েখ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাইয়ের ভয়াবহ তাণ্ডবে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল গোটা বাংলাদেশ। তখন বিএনপি নেতারা বলেছিল, ‘বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি’। অথচ পরবর্তী সময়ে দিবালোকের মতো স্পষ্ট ও প্রমাণিত হয় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তৎকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাংলাভাইয়ের সৃষ্টি এবং জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিকাশ ঘটেছিল।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাজশাহীতে প্রশাসনের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছিল বাংলাভাইয়ের জঙ্গি বাহিনী। লুঙ্গি নেতাদের সঙ্গে বিএনপির তৎকালীন মন্ত্রী-এমপিদের প্রকাশ্য বৈঠকের ছবি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে উগ্র-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও জঙ্গিবাদের বিষবৃক্ষ রোপণ করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে জিয়াউর রহমান। বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশে উগ্র-সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়। জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে চারা রোপণ করেছিল, তার পত্নী খালেদা জিয়ার শাসনামলে তা ব্যাপক বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে এক মহীরুহে পরিণত হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রশিদ-ফারুকরা মধ্যপ্রাচ্যের উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সহযোগিতায় ‘ফ্রিডম পার্টি’ নামে একটি ফ্যাসিবাদী সংগঠন গড়ে তোলে এবং বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টিকে সংসদের প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা দেয়।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বিএনপির শাসনামলে ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে। এই অপশক্তি যশোরের উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, খুলনায় আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভাস্থলের কাছে ও হেলিপ্যাডে বোমা পুঁতে রাখা, রমনার বটমূলে হামলা, গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরে গির্জায় হামলা ও নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলাসহ একাধিক জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি মুফতি হান্নানসহ একাধিক জঙ্গি নেতার আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়, তারেক রহমানই ছিল এই গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড।
এ ঘটনায় নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন। বিএনপি, জামায়াত, বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্র, দেশি-বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্মিলিত ষড়যন্ত্রেই এই হামলা পরিচালিত হয়।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের হামলা থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীও রেহাই পাননি। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে জেএমবি ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশে কমপক্ষে ২৬টি হামলা চালায়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০টি স্থানে একযোগে বোমা হামলা, ময়মনসিংহে ফাইলা পাগলার মাজার ও ময়মনসিংহের ৩টি সিনেমা হলে বোমা হামলা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন স্থানে ১৭ আগস্টের পর অসংখ্য আত্মঘাতী হামলার বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন নিহত হন। আহত হন চার শতাধিক। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে দুই বিচারককে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারক-বাহক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছে এবং উদার রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল।
আরও বলা হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধী ও উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দ্বারা আওয়ামী লীগ বারবার আক্রান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলায় নিহত হয়েছেন।