প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ০৪:৩০
জাহাঙ্গীরকে ফের দুদকে তলব
অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গাজীপুরের বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের তলব করে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এবারের তলবি নোটিশে তাকে আগামী ৬ ও ৭ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ মে) দুদক প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে তলবি নোটিশে জাহাঙ্গীর আলমকে ২১ ও ২২ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়।
গত ২১ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এর আগে ১৮ মে অভিযোগ বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানাতে দুদকের কাছে একমাস সময় চেয়ে আবেদন করেন গাজীপুর সিটির সাবেক এ মেয়র। মূলত এই সময় চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আবার তলব করা হয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলম উল্লেখ করেন, ‘গত ১৬ মে আপনার (মো. আলী আকবর, উপ-পরিচালক, দুদক) সই করা দুটি নোটিশ গ্রহণ করি। নোটিশে আমাকে ২১ মে সকাল ১০টায় সংশ্লিষ্ট অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার জন্য দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হতে অনুরোধ করা হয়। এত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দাখিল বা বক্তব্য দেওয়া আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। যথাযথ দফাওয়ারি জবাব দাখিল বা বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমার একমাস সময় প্রয়োজন।’
জানা যায়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে তাকে তলব করা হয়েছে।
গত বছরের জুনে গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। একই সঙ্গে দুই সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে এক প্রজ্ঞাপনে বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই প্রজ্ঞাপনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া দরপত্র, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়ার অনুরোধ সংক্রান্ত (আরএফকিউ) দরপত্রে অনিয়ম, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর হাটবাজার ইজারার টাকা যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এছাড়া ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাস্তা প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, উল্লিখিত অভিযোগগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার, বিধিনিষেধের পরিপন্থি কার্যকলাপ, দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত অপশাসনের শামিল, যা সিটি করপোরেশন আইনানুযায়ী অপসারণযোগ্য অপরাধ। এরই মধ্যে এসব অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার মাধ্যমে সিটি করপোরেশন অপসারণের কার্যক্রমও শুরু করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
একই বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য সংবলিত ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গত ৩ অক্টোবর তাকে শোকজ করা হয়েছিল। আর চলতি বছরের ১৫ মে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।
আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন। গাসিকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। পরে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী হিসেবে মনোয়নপত্র সংগ্রহ করলেও ঋণখেলাপির দায়ে যাচাই-বাছাইয়ে তা বাতিল হয়ে যায়। তবে, তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়। মায়ের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নামায় জাহাঙ্গীরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।