প্রকাশ : ০২ মে ২০২৩, ০২:৩২
মাথা নিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জীবনে আমাকে অনেক ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কখনোই মাথা নত করিনি। আমি কখনো মাথা নিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না।’
দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাঙালি একটি বিজয়ী জাতি। আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চাই। নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, দুস্থ-অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই ক্ষমতাগ্রহণ করেছি।’
সোমবার (১ মে) বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তরে প্রিস্টন অডিটোরিয়ামে ‘বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের ৫০ বছরের প্রতিফলন’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অব্যাহত ও অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আমার আশপাশে থাকা লোকদের কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। সেইসঙ্গে দেশের জনগণের অটুট সমর্থনও রয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতাগ্রহণ করে আমার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার করে। টানা তিন মেয়াদে জনগণ ও দেশের সেবা করার সুযোগ পাওয়ায় আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ। গত দেড় দশকে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলোর জন্য বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। ২০২১ সালে জাতিসংঘ এটিকে দ্বিতীয়বারের মতো এলডিসি মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভের যোগ্য ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ২৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্যাকেজ এবং বিনামূল্যের গণটিকাদানের মাধ্যমে সফলভাবে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব সম্পদে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করেছি। গত বছর এর উদ্বোধন সম্ভবত আমাদের সহনশীলতা ও সাফল্য অর্জনের সেরা উদাহরণ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যার জিডিপি ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের অর্থনীতি গত এক দশকে গড়ে ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারির ঠিক আগে এটি ৮.১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এর ফলে ২০২২ সালে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ২০২২ সালে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে যা ২০০৬ সালে ছিল ৪১.৫ শতাংশ।
সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমান সরকার সামাজিক সুরক্ষার জন্য জাতীয় বাজেট বরাদ্দ ৪০ গুণ বাড়িয়েছে, যা জিডিপির ২.৫ শতাংশ। সরকার এক বছর আগে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। বিনা খরচে সব গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য কাজ চলমান। আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে আমরা প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে বিনা খরচে বাড়ি দিয়েছি। আয়-সংস্থানমূলক দক্ষতা ও সহায়তা দিয়েছি। সরকার প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা ও বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে।
বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার আঞ্চলিক দেশগুলোর তুলনায় বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সম্প্রতি আমাদের জাতীয় জিডিপিতে নারীদের গৃহস্থালির কাজ প্রতিফলিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক সংযোগ, বিমান ও লজিস্টিক হাব হিসেবে গয়ে তোলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক ১০ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
‘বাংলাদেশ এরইমধ্যে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্বের শতাধিক সেরা সবুজ কারখানার অর্ধেকেরও বেশি এখন বাংলাদেশে রয়েছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য রূপকল্প চালু করেছে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করবো- বিশ্বব্যাংক আগামী বছরগুলোতে আমাদের ভৌত ও সামাজিক উভয়খাতে মেগা প্রকল্পগুলোতে সম্পৃক্ত হবে।২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ অবকাঠামো ও লজিস্টিকসে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে।’
এদিন প্রিস্টন অডিটোরিয়ামে ‘বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের ৫০ বছরের প্রতিফলন’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চলাকালে দুই পক্ষের মধ্যে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী- বাংলাদেশে পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নে আড়াই বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক।
অধিবেশনে ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে পদ্মা সেতুর একটি ছবি তুলে দেন। এ সময় তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।