প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:৫৬
অগ্নিকাণ্ড-দাবদাহে নিউমার্কেটে ঈদের কেনাকাটায় ভাটা
ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বিপণিবিতান ও ফুটপাতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেখা গেছে ক্রেতাদের আনাগোনা। রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম নিউমার্কেটও জমে উঠেছিল ঈদের কেনাকাট। তবে গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনার পর থেকে তাতে ছেদ পড়ে।
রোববার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকেই নিউমার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় কম লক্ষ করা যায়। বিক্রেতারা বলছেন, আগুন লাগার ঘটনায় আতঙ্ক ও তীব্র গরমের কারণে নিউমার্কেটে ক্রেতা সমাগম কম।
সরেজমিনে সাইন্স ল্যাব সংলগ্ন পাঞ্জাবী মার্কেট, জাহান ম্যানশন, গোল্ডেন গেট শপিং সেন্টার, গ্লোব শপিং সেন্টার, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, নেহার ভবন শপিং কমপ্লেক্স, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেট, চাদনি চক মার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় কম লক্ষ করা যায়। এছাড়া ফুটপাতেও অন্যদিনের তুলনায় ক্রেতা সমাগম কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর নিউমার্কেট ও এর সংলগ্ন মার্কেটগুলো থেকে তৈরি পোশাক কেনার পাশাপাশি কসমেটিকস, ক্রোকারিজ আইটেম কিনে থাকেন তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। একসঙ্গে প্রায় সব পণ্যের সমাহারের কারণে এসব মার্কেট রাজধানীবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয়। তবে আগুন ও তীব্র গরমের কারণে এবার বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগুন ছাড়াও তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অনেকেই সকালে ও দুপুরে বের না হয়ে রাতে কেনাকাটা করতে বের হচ্ছেন। এজন্য নিউমার্কেট রাতে জমজমাট হচ্ছে।
এর আগে শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ মার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর একে একে ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়।
পরে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেখানে যোগ দেন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনাস্থলে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়। তাদের সহযোগিতা করেন স্বেচ্ছাসেবীরাও।
নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পর এর বাম পাশে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। রোববার দুপুর ১২টার দিকে এ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা শুরু করেন। তবে দোকান খুললেও ক্রেতাদের উপস্থিতি তেমন নেই। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুতের লাইন।
ব্যবসায়ীরা চার্জার লাইট, জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। তবে কখন বিদ্যুৎ আসবে তা জানেন না ব্যবসায়ীরা।
অগ্নিকাণ্ড ও গরমের পাশাপাশি ক্রেতা না আশার কারণ হিসেবে মার্কেটে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকাকেও দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, কালকের আগুনের পর থেকে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ। মার্কেটে কোনো ক্রেতা নেই।
মার্কেট বন্ধের কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কেট বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই।
এ মার্কেটের সেতু লেডিস অ্যান্ড বেবি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মহশিন বলেন, গতবারও ঈদে বেচাকেনা হয়নি। এবারও শুরু থেকে মার্কেট খারাপ, এরপর আগুন সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। মার্কেটে বিদ্যুৎ নেই, কবে আসবে তাও জানি না।
এদিন নুরজাহান মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানেই ক্রেতােদের উপস্থিতি দেখা যায়। তবে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে যেমন আশা করেছিলাম, তেমন বিক্রি নেই।
দুপুর ১২টার দিকে নুরজাহান মার্কেটের ইয়াং জোনের বিক্রয়কর্মী টুটুল বলেন, আগুনের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আজকে তেমন কাস্টময়ার নেই। অন্যদিনের তুলনায় আজকে কাস্টমার কম। ভয়াবহ গরমের কারণে ক্রেতারা বাসা থেকে বের হতে অস্বস্তি বোধ করছেন।
শাহিন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেটে ক্রেতা আছে, কিন্তু বিক্রি নেই। এ গরমেও কাস্টমার এসেছেন। গত শুক্রবারও ভালো বেচাকেনা হয়েছে। তবে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে বেচাকেনা পড়তির দিকে। আগুন লাগায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে।
নুরজাহান মার্কেটের ফারদিন গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, আগুন লাগার পর প্রচার হয়ে গেছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিউমার্কেট বন্ধ। অনেকেই নিউমার্কেট বন্ধ ভেবে আসছেন না। কিন্তু নিউমার্কেট এলাকার অন্য মার্কেটগুলো খোলা আছে, এটা প্রচার হওয়া দরকার।
এছাড়া নুর ম্যানশন, চাঁদনি চক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে দুপুরের পর থেকে ক্রেতা সমাগম বাড়তে থাকে। ক্রেতার ভিড় রয়েছে ফুটপাতেও।
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের শাড়ি বিক্রেতা রমজান মিয়া বলেন, ক্রেতারা আসছেন। গরমের কারণে অনেকেই দেরি করে বের হচ্ছেন। শাড়ির মার্কেটে নিউ মার্কেটের আগুনের কোনো প্রভাব পড়বে না। গরম পড়েছে, তাপের কারণে কাস্টমাররা ইফতারের পর বের হচ্ছেন।
তিনি বলেন, গতকাল আগুন লাগার পর কিছুক্ষণ মার্কেট বন্ধ ছিল। তবে সন্ধ্যায় ভালো বেচাকেনা হয়েছে।