প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ০১:১০
শান্তিময় পৃথিবীর প্রত্যাশায় মঙ্গল শোভাযাত্রা
‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গানকে প্রতিপাদ্য ধারণ করে শুরু হয়েছে বাংলা নববর্ষের উদযাপনের প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। নতুন বছরে শান্তিময় পৃথিবীর প্রত্যাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে এ শোভাযাত্রা।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দের সকাল ৯টার কিছু সময় পরপরই শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড় ঘুরে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে।
শোভাযাত্রার আগে সরেজমিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দেখা যায়, এ আয়োজনকে সফল করতে ভোর থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন আয়োজকরা। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরুর জন্য অপেক্ষা করেন বিভিন্ন নানা বয়সী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন রমজান মাস হওয়ায় এবারের পহেলা বৈশাখের সকালে পান্তা-ইলিশের আয়োজন হয়নি। আর প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে শিশু ও বয়স্কদের উপস্থিতি কিছুটা কম।
তবে পুরোনো গ্লানি, হতাশা আর মলিনতাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় নতুন বছর বরণ করতে কোনো অনীহা নেই তরুণদের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হওয়ার আগে থেকেই তাদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, দোয়েল চত্বরে তাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এছাড়া শোভাযাত্রায় অংশ নিতে প্রতি বছরের ন্যায় বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উপস্থিত হয়েছেন।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টিএসসি এলাকায় এসেছেন।
সেখানে কথা হয় মিরপুর বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী জুয়েল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করি। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ না করলে বৈশাখকে অপূর্ণ মনে হয়।’
এ শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা নারীদের বেশিরভাগের পরনে শাড়ি আর মাথায় নানা রঙের ফুল দেখা গেছে। পুরুষদের পরনে সাদাসহ নানা রঙের পাঞ্জাবি। অনেকেই শরীরে এঁকেছেন বাঙালির ঐতিহ্যের নানা প্রতীক।
এদিকে শোভাযাত্রাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাত থেকেই টিএসসিসহ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সকাল থেকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে সবখানে মোতায়েন আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
বিগত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অন্ধকার ঘোচানোর আহ্বানে পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। এটিই পরে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামধারণ করে। গত তিন দশক ধরে প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হচ্ছে।