প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ২১:১৫
সেপ্টেম্বরে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের রেলপথ উদ্বোধন: রেলমন্ত্রী
প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু অতিক্রম করলো ট্রেন। এতে দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় আরও একটি সফলতার পালক যুক্ত হলো।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেল জংশন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ‘বিশেষ ট্রেন’ যাত্রা শুরু করে। দুপুর ১টা ২১ মিনিটে ছেড়ে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছায় ট্রেনটি।
পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো বিশেষ ট্রেনে যাত্রা করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এসময় তার সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ নানা পেশার লোকজন ছিলেন।
মাওয়া স্টেশনে পৌঁছে প্রেস ব্রিফিংয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, সড়কসেতু প্রধানমন্ত্রী উদ্ধোধন করেছেন। আজ ট্রেন চলার মাধ্যমে এই সেতু পূর্ণতা পেলো। আমাদের পরিকল্পনা আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলসংযোগ কানেক্ট করবো, নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচলের জন্য উপযোগী হবে। আজকে পরীক্ষামূলক ট্রেন চললো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেপ্টেম্বর মাসে সেটির উদ্বোধন করবেন। ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলসংযোগ প্রকল্প চালু করা হবে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সংযুক্ত করা গেলে এই অংশ দিয়ে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
তিনি বলেন, ১৭২ কিলোমিটার রেলসংযোগ প্রকল্পের তিনটি অংশের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ অংশের ১৩টি মেজর ব্রিজের কাজ শেষ, রেলস্টেশনের কাজ ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছে। যশোর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮৩ কিলোমিটার পথের কাজ ৯৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। মাওয়া-ঢাকা অংশের ১২ কিলোমিটার সড়ক পথের কাজ শেষ হয়েছে। ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজ ৯৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পুরো অংশের ৭৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে ১০০টি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি কোচ এসে পৌঁছেছে, বাকিগুলো আসছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির এখন কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামী বছরে এ বিষয়টি বলা যাবে।
পদ্মাপাড়ে উচ্ছ্বাস
স্বপ্নের সেতুতে ট্রেন চলায় উচ্ছ্বসিত ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা। দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে এই রেলপথ। যাতায়াতে দুর্ভোগ লাগবের পাশাপাশি রাখবে আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা।
মাওয়ার বাসিন্দা মো. আকবর হোসেন বলেন, দেখতে দেখতে সড়কের পর সেতুর রেললাইনের কাজ শেষ হলো। এখন মানুষ আরও ভালোভাবে পদ্মা পাড়ি দিতে পারবে।
ইলিয়াস হোসেন বলেন, পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে গাড়ি চলবো এটা ভাবতেও পারি নাই। এখন ট্রেনও চলতাছে, খুব খুশি লাগতাছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী মাসুদ খান বলেন, সড়কপথ চালুর মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থার দুর্ভোগ শেষ হয়েছে। ট্রেন চালুর মাধ্যমে আর কোনো সমস্যাই থাকলো না। ঢাকা থেকে যশোর দ্রুত যাওয়া-আসা করা যাবে। এতে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে এ অঞ্চলের।
আলেয়া বেগম নামে এক নারী বলেন, এখন যত দ্রুত সবার জন্য ট্রেন চালু হয় ততই ভালো। কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ঢাকা থেকে যশোর যাওয়া-আসা করা যাবে।
এদিকে, প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুতে চলা ট্রেনের চালক ছিলেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে ট্রেন চালাচ্ছি। আজকের দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। দেশের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপ নিয়েছে এবং সে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালিয়ে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। এটি আমার জীবনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রবিউল বলেন, আজকে পরীক্ষামূলকভাবে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে চালানোর নির্দেশনা ছিল। পুরোপুরি চালু হলে গতি অনেক বাড়বে, সময় কমে আসবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। গত ৩১ মার্চ পদ্মা সেতুসহ দুইপাশের ভায়াডাক্ট মিলিয়ে ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ করেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা।