প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩, ০৩:৫০
সব দলকে ভোটে আসতে আহ্বান জানাচ্ছে সরকার, সিএনএনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিতে সব দলকে সরকার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে নির্বাচন নিয়ে কখনোই কোনো বাধা ছিল না। অবশ্য সংবিধান মানতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করার আন্দোলন সরকার সমর্থন করতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএনের এডিটর অ্যাট লার্জ রিচার্ড কোয়েস্টের সঙ্গে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প : আগামীর পথনকশা’ বিষয়ক এক কর্মঅধিবেশনে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও এ অধিবেশনে সিএনএনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
ঢাকায় তিন দিনের বিজনেস সামিটের উদ্বোধনী দিনে গতকাল শনিবার বিকেলে এ অধিবেশনের আয়োজন করা হয়। সকালে সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর আয়োজনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সামিটের বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রচার আছে, আপনাদের সরকার গণতান্ত্রিক নয়– রিচার্ড কোয়েস্টের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাজারে অনেক ধারণাই আছে। কিছু মিডিয়ায় এ ধরনের অপপ্রচার আছে, যা সঠিক নয়।
আপনারা ১৪ বছর ক্ষমতায় আছেন, পৃথিবীর বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশেও জনগণের মধ্যে কর্মসূচির বদল হওয়ার ঘটনা আছে– এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনগণের চাহিদা মাথায় রেখে সরকার নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে।
সিএনএনের প্রশ্নের পর দর্শক সারি থেকে প্রশ্ন আহ্বান করেন রিচার্ড কোয়েস্ট। এ সময় দর্শক সারি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান দুই মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, গত জাতীয় নির্বাচনে যেভাবে আগের রাতে ভোট হয়ে গেছে, একইভাবে আগামী নির্বাচনও হবে কিনা? তবে এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি দুই মন্ত্রীর কেউই।
বাংলাদেশ চীনা ঋণের ফাঁদে পা দিল কিনা– কোয়েস্টের এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এটা ঠিক, চীন বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার। এর বাইরেও পৃথিবীর অনেক দেশ বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা দিচ্ছে। তবে কোনো দেশের সঙ্গে কোনো ধরনের ফাঁদে নেই বাংলাদেশ। কারণ, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গেই ঋণ নেওয়া হয়।
ঋণের চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জনের সুযোগ থাকলেই কেবল ঋণ নেওয়া হয়। বাংলাদেশে চীনা ঋণের ফাঁদ নিয়ে একটা ভুল ধারণা আছে। এটা নিতান্তই ভুল। বরং চীনের তুলনায় জাপান থেকে বেশি ঋণ পায় বাংলাদেশ।
জোটনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ এখন কঠিন অবস্থায় পড়েছে কিনা– সিএনএনের এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। কখনোই যুদ্ধ সমর্থন করে না। কারণ, যুদ্ধে ধনী-গরিব সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শান্তির দেশ হিসেবে জাতিসংঘের মিশনে বাংলাদেশের বড় অংশগ্রহণ এবং ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রসঙ্গ শেষে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সিএনএন প্রতিনিধি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে রিচার্ড কোয়েস্ট জানতে চান, অর্থনীতির সব সূচক নিম্নমুখী, বাণিজ্যে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, এটা ঠিক। তবে করোনার অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব খুব ভালোভাবেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই।
রিচার্ড কোয়েস্ট জানতে চান, তাহলে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের উদ্বেগ কী নিয়ে– এ প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, যুদ্ধই বাংলাদেশের এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
রপ্তানিপণ্যে মূল্য সংযোজন প্রশ্নে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে কীভাবে লড়ছে বাংলাদেশ– এ প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন ব্যবস্থায় দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পরিমাণে পণ্য কম রপ্তানি করেও বেশি রপ্তানি আয় করা সম্ভব হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, রপ্তানি পণ্যে বেশ ভালোভাবেই মূল্য সংযোজন হচ্ছে।
শিক্ষা খাতে পিছিয়ে পড়ার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে কোয়েস্ট জানতে চান, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও বিনিয়োগ পরিকল্পনা আছে কিনা? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অধিবেশন শেষে বাংলাদেশের উন্নয়ন-যাত্রায় শুভকামনা জানান রিচার্ড কোয়েস্ট। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসেছেন তিনি। তবে এটা তাঁর শেষবারের মতো আসা নয়।
এ অধিবেশনের আগে ব্যবসায় বাংলাদেশ নিয়ে সিএনএন ইনসাইটস তুলে ধরেন সিএনএনের দুই কর্মকর্তা রব ব্রাডলি ও টিনি সেভ্যাক।