প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৩১
আত্মহত্যা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েই বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন ফারদিন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধারের পর ধারণা করা হচ্ছিল তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, ফারদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি, হতাশা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
দীর্ঘ ৩৮ দিনের তদন্ত শেষে তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, নিখোঁজ হওয়ার আগে ফারদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একা একাই ঘুরে বেড়িয়েছেন। পারিপার্শ্বিক বিষয় দেখে মনে হয়েছে তিনি আত্মহত্যা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সবকিছু মিলিয়েই আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি।
এর মধ্যে ডিবির তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) ডিবি কার্যালয়ে আসেন বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী। প্রায় তিন ঘণ্টা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ শেষে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, ডিবির তদন্তে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। ডিবির কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত দেখে এগুলো প্রাসঙ্গিক বলে দাবি করেন তারা।
এরপর ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনা আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমরা তার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলেছি। বান্ধবী বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ব্যাখ্যা দিয়েছি। আসলে তার সঙ্গে কেউ ছিল না, একা একাই বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন।
যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর একপাশে তিনি নামেন। কিন্তু তিনি চনপাড়ার দিকে যাননি, সেখানে কোনো ঘটনাও ঘটেনি। ঘটনার ৩৮ দিন তদন্ত শেষে এটিকে আমরা আত্মহত্যার ঘটনা বলেছি। এ বিষয়ে বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী এসে তিন ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা তার পরিবার, বন্ধু-আত্মীয়দের বলেছি ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, ফারদিন সেদিন রাতে বাবুবাজার ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজে যান। অথচ গত দুই বছরেও তিনি এসব এলাকায় যাননি। ফারদিন দুই বছরে ফোনে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছেন। আমরা সবার কাছে খোঁজ-খবর নিয়েছি।
ফারদিন বিভিন্ন ধরনের বই পড়তেন উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় হতাশার কথা বলেছেন। এক বান্ধবীকে লিখেছেন, ‘৩০ বছরের বেশি কারও বাঁচার দরকার নাই’।
তিনি আরও বলেন, আবার কাউকে লিখেছেন, ‘যদি মারা যাই, বন্ধু সাজ্জাদ কষ্ট পাবে’। আরেকজনকে লিখেছেন, ‘কোনো একদিন শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে আমি আত্মহত্যা করেছি’। ফারদিন শুক্রবারই আত্মহত্যা করেছেন।
‘বন্ধুদের সঙ্গে তার কথা পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে ফারদিন হতাশায় ভুগছিলেন। তাছাড়া ফারদিনের মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, ধস্তাধস্তির আলামত নেই। তার মোবাইল-টাকা পকেটে ছিল, হাতে ঘড়ি ছিল। কোনোকিছু খোয়া যায়নি। বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থীও এসব আলামত দেখে একমত পোষণ করেছেন।’
ডিবিপ্রধান বলেন, ফারদিন আত্মকেন্দ্রিক ছিলেন। তার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল, কিন্তু কাউকে কিছু বলেননি। ফারদিন লিখেছেন, ৯৫ শতাংশ মানুষের জীবন পরিবার দ্বারা সীমাবদ্ধ। হয়তো পরিবার তাকে বাসায় থাকতে বলতো, কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন না। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাই এখানে মার্ডারের কোনো লক্ষণ নেই। যেসব ব্রিজে তিনি গেছেন সেদিন রাতে এর আগে দুই বছরেও সেসব এলাকায় যাননি।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা গতকালই তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি এ বিষয়ে। কোনো মানুষ যদি দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করে সেখানে তো সাক্ষী থাকে না। পারিপার্শ্বিক বিষয় দেখে মনে হয়েছে তিনি আত্মহত্যা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সবকিছু মিলিয়েই আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি।
কারাগারে বন্দি ফারদিনের বান্ধবী বুশরার বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আদালতের বিষয়। আমরা আমাদের রিপোর্টে জানিয়ে দেবো তার সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি।