শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:৩২

সব এলাকায় বিশেষায়িত হাসপাতাল করার লক্ষ্য রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

সব এলাকায় বিশেষায়িত হাসপাতাল করার লক্ষ্য রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক

স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে মৌলিক চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের (ডব্লিউএইচএফ) সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য এরই মধ্যে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। হৃদযন্ত্র, কিডনি এবং ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে অনেক বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ডব্লিউএইচএফ প্রেসিডেন্ট ডা. জগৎ নরুলা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ডব্লিউএইচএফের প্রতি এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর মৌলিক গবেষণা পরিচালনায় আমাদের সহায়তা করুন এবং আমাদের জনশক্তি বিকাশে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ দিন।

দেশের সার্বিক উন্নয়নে মৌলিক গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নতির জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর গবেষণায় অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি খাতে গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ দুধ, মাছ ও মাংস উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ কৃষি খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে প্রধানত গবেষণার অবদান রয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সংক্ষেপে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি সারাদেশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন শুরু করেন। কিন্তু তিনি তার কাজ শেষ করতে পারেননি। কারণ ১৯৭৫ সালে তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে এই পরিকল্পনা তৈরি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে তার সরকার আবার ক্লিনিক স্থাপন শুরু করে।

তিনি বলেন, এখন সারা দেশে ১৮ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছে। অসচ্ছল ও দরিদ্র ডায়াবেটিক রোগীরাও বিনামূল্যে ইনসুলিন পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, সরকার চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য এরইমধ্যে বিভাগীয় সদরে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। একই সঙ্গে সব বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা ভাবছে।

ওষুধ খাতের সফলতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ওষুধ খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে জীবন রক্ষাকারী সব ওষুধ উৎপাদন এবং বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

এসময় ডব্লিউএইচএফ’র নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জগৎ নরুলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি এই অগ্রগতিকে ‘আকর্ষণীয় অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর প্রতিভাবান চিকিৎসক রয়েছেন, যাদের দক্ষতা বাড়াতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রয়োজন।

জগৎ নরুলা বলেন, আমি আগামী জানুয়ারিতে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এরপর হৃদরোগ নিয়ে প্রথমে বাংলাদেশ, ভারত ও মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে কাজ করার লক্ষ্য রয়েছে।

এসময় ডা. নরুলা অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে মায়েদের সচেতন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ, যার মধ্যে ১৭ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী হৃদরোগ।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন বৈঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র ও অসচ্ছল হৃদরোগীদের জন্য ভালভ, স্টেন্ট ও পেসমেকার কিনতে তার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ৭ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। তিনি জানান, এ পর্যন্ত রোগীদের হার্টে ৩০০টি ভালভ, ৪৫০টি স্টেন্ট এবং ২৫০টি পেসমেকার স্থাপন করা হয়েছে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কার্ডিওভাসকুলার ইন্টারভেনশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুর রহমান, বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার মো. (অব.) আবদুল মালিক, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অধ্যাপক চৌধুরী হাফিজ আহসান, অধ্যাপক এম জি আজম ও অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়