মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১৪

জঙ্গি আরাফাতকে ছিনিয়ে নেওয়াই ছিল মূল টার্গেট: সিটিটিসি

জঙ্গি আরাফাতকে ছিনিয়ে নেওয়াই ছিল মূল টার্গেট: সিটিটিসি
অনলাইন ডেস্ক

ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে চারজনকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। তবে তাদের প্রথম টার্গেট ছিল মো. আরাফাত রহমান (২৪)। আরাফাত বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ড. অভিজিৎ রায়সহ পাঁচ ব্লগার হত্যা মামলার আসামি।

তবে আরাফাতকে ছিনিয়ে নিতে না পারলেও জঙ্গিরা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফিকে (২৪) জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

২০১৬ সালে সিলেট থেকে গ্রেফতার হয়েছিল মেহেদী হাসান ওরফে অমি। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হয় অমি।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, যে মামলায় হাজিরা দিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিরা আদালতে এসেছিল, সেই মামলার মেহেদী হাসান অমিও একজন আসামি। জামিন পাওয়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে সে হাজিরা দিতো। প্রতি তারিখেই হাজিরা দিতে আসায় কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে কথাবার্তা হতো তার। কারাগারে থাকা জঙ্গিদের বাইরের মেসেজ আদান-প্রদান করতো অমি। এরই অংশ হিসেবে ২০ তারিখে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।

সিটিটিসির প্রধান বলেন, হাজিরা দেওয়ার দিন মোটা অংকের টাকা আদালতে নিয়ে আসে অমি। যে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়া হবে, সেই আসামিদের খরচ নির্বাহের জন্য টাকা দেওয়া হয়।

এ টাকা কীভাবে কোথা থেকে অমি এনেছিল সেটিও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান আসাদুজ্জামান।

এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, জঙ্গিদের ছিনিয়ে নিতে এক নম্বর প্রায়োরিটি ছিল মো. আরাফাত রহমান। আরাফাতকে পুলিশ সদস্যরা ধরে ফেলে।

জঙ্গিরা তথ্যের গোপনীয়তা অতিমাত্রায় বজায় রাখে। জামিন পাওয়ার পর নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো গ্রেফতার মেহেদী হাসান অমি। অমি একসময় আনসার আল ইসলামের দাওয়াহ বিভাগের প্রধান ছিল। এ কারণে সংগঠনে তার প্রতি কোনোভাবেই বিশ্বাসের চিড় ধরেনি।

আদালতে এনে অমি কীভাবে আসামিদের হাতে টাকা দিলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাজিরা দিতে আদালতের এজলাসে দাঁড়িয়েছে। এর কোনো এক ফাঁকে টাকা হস্তান্তর করেছে।

জঙ্গি ছিনিয়ে নিতে শুধু পিপার স্প্রেই আনা হয়েছিল না কি ভারী অস্ত্রও নিয়ে আসা হয়েছিল, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে রেঞ্জ ও মোটরসাইকেলসহ আরও কিছু আলামত উদ্ধার করেছি। দু-একজকে গ্রেফতার করলে তাদের সঙ্গে আরও কি কি ছিল জানা যাবে।

একজন জঙ্গি জামিনের পর তাকে মনিটরিং করে আইনশৃংখলা বাহিনী। একজন জঙ্গি ৫ বছর জামিন নিয়ে বাইরে থেকে হাজিরা দিচ্ছে। তার পরিকল্পনায় এভাবে জঙ্গি ছিনতাই।

এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনিটরিংয়ে কোনো গ্যাপ আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, এটি সিটিটিসির অপারেশনাল গোপনীয়তার বিষয়। তারা অত্যাধুনিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করে। সম্প্রতি জঙ্গি সম্পৃক্ততায় দুজন চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়। রোগী দেখার মধ্যেই তারা গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।

সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, মেজর জিয়ার অবস্থান জানা গেলে আমরা গ্রেফতার করবো। তার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

৫ দিন পার হলেও পলাতক জঙ্গিরা এখনো কেন ধরা পড়েনি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের গ্রেফতার করা। ৫-১০ দিন টাইম দিয়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান চলে না। এটি স্বাভাবিক খুন কিংবা চুরির আসামি নয়। জঙ্গিবাদ অথবা সন্ত্রাস দমনের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। সাধারণ অপরাধের সঙ্গে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে মেলানো যাবে না।

হ্যান্ডকাফের চাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি হ্যান্ডকাফ কেটেছে। চাবির বিষয়টি তদন্তে পাওয়া যায়নি।

গত ২০ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে করে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যান জঙ্গিরা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়