প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ০১:৪১
সরকার রিজার্ভের এক পয়সাও নষ্ট করেনি, জনগণের স্বার্থেই ব্যয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কখনো রিজার্ভ থেকে এক পয়সাও নষ্ট করেনি। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এ অর্থ ব্যয় করেছে। দেশের মানুষের স্বার্থ, মানুষের কল্যাণে টাকা খরচ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সবসময় বিষয়টি (রিজার্ভ) নিয়ে কথা বলেন। তারা সবসময় রিজার্ভের টাকা খরচ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। কারণ তাদের নেতা তারেক রহমান মানিলন্ডারিং মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। তাকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। তিনি এখন পলাতক আসামি।’
শনিবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
গণভবন থেকে সাভারের আশুলিয়া বাজার সংলগ্ন কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা।
এসময় বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের বলতে চাই, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০০১-২০০৮ সাল পর্যন্ত সময়ে এটি বেড়ে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার হয়। সেই জায়গা থেকে আমরা এ রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হই।’
শেখ হাসিনা বলেন, সারাবিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম, পরিবহন খরচ, জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, ভুট্টাসহ যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, তার দাম বেড়েছে। বাংলাদেশ চাল উৎপাদন করলেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমদানিও করতে হচ্ছে। ফলে আমরা যেটুকু খরচ করেছি, তা জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে।
তিনি বলেন, জনগণের খাদ্য কেনা, ওষুধ কেনার জন্যই খরচ করতে হয়েছে। সার, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে, নগদ টাকা দিয়ে আমরা এগুলো কিনছি। তাছাড়া আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে বিমান ক্রয় করেছি। নদী ড্রেজিং যেমন নিজেদের অর্থে করছি, তেমনি কিছু বিনিয়োগও আমরা করছি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে আমরা একযোগে ১০০ সেতু উদ্বোধন করেছি। পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি, যমুনার ওপর সেতু করাসহ সারাদেশে যোগাযোগের যে নেটওয়ার্কটা করতে পেরেছি, তার ফল জনগণ পাচ্ছে। কাজেই রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, গিলেও খায়নি বা কেউ নিয়েও যায়নি।’
‘তবে হ্যাঁ, বিএনপি তো এসব বলবেই, এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কারণ তারেক রহমান নিজেই মানিলন্ডারিং করেছে। এটা আমরা তদন্ত করে বের করিনি, আমেরিকার তদন্তেই বেরিয়েছে। এফবিআই থেকে অফিসার এসে এখানে তারেকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। এটা জনগণের জানা উচিত’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এ টাকা যদি সরকার অন্য দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নিতো, তাহলে সুদসহ টাকা পরিশোধ করতে হতো। আর আমাদের দেশের ব্যাংক থেকে দিলে, যেটা সোনালী ব্যাংক থেকে আমরা দিচ্ছি, তাহলে ওই সুদসহ দেশের টাকা দেশেই থেকে যাচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রায় আট বিলিয়নের মতো অর্থ রিজার্ভ থেকে আমরা খরচ করছি। এখান থেকে কিছু ডলার শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুরবস্থায় ধার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারা (জিয়া পরিবার) নিজেরা চুরি করে অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে। কারণ তাদের তো কিছুই ছিল না। জিয়াউর রহমান যখন মারা যায়, তখন আমরা ৪০ দিন টেলিভিশন দেখেছি যে ভাঙা স্যুটকেস, আর ছেড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি। অথচ পরে দেখা গেলো তারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করেই এটা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশ স্বাধীন করেছেন। আমরা আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। কারণ জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, আমরা সেটাই পূর্ণ করতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছি বলে গত ১৪ বছরের মধ্যে এ বাংলাদেশ বদলে গেছে।’
বেশিরভাগ উন্নয়ন কাজ নিজেদের অর্থায়নে হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘যাতে কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয়। নিজেদের সম্মান নিয়ে আমরা নিজেরা চলবো। মাথা উঁচু করে বাংলাদেশ সম্মানের সঙ্গে চলবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমাদের মাথা উঁচু করেই চলতে হবে। এ কথা সবাইকেই মনে রাখতে হবে।’
দুর্ভিক্ষের ধাক্কা এড়াতে সবাইকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের ফসল উৎপাদন করতে হবে। পুষ্টি নিশ্চয়তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সাবধানতা আমাদেরই নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সড়কপথ, নৌপথ, আকাশপথের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করছি। এসবের জন্য টাকা খরচ হচ্ছে। রিজার্ভের টাকা তো লাগবেই, এটাই হলো বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তৃতা করেন। সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন এক্সপ্রেসওয়ে সম্পর্কে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। আশুলিয়া প্রান্তে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানসহ সর্বস্তরের মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।