প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২২, ০০:৫৫
সরকারি কর্মচারীরা সযত্নে জয় বাংলা স্লোগান এড়িয়ে যান
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আজকে শুধু মাদরাসাগুলোতে নয়, কেজি (কিন্ডারগার্টেন) স্কুলেও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। বাস্তবতা এটা। অথচ সরকারের আইন আছে।
তিনি বলেন, এখনও রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান যা আইনে আছে-সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত, তা খুব সযত্নে অনেকেই এড়িয়ে যান।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ৫১তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করুন’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বিএনপির মধ্যে অন্তত ৩০ ভাগ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আছে। এরা কমে নাই। কোনো রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয় নাই। কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারা পাকিস্তান জিন্দাবাদের মতো বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলেন।
অসাম্প্রদায়িকতার শক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর এই অসাম্প্রদায়িক সংবিধান শুধু প্রয়োগ করলে হবে না, একই সঙ্গে মানুষের মনোজগতে তা আনতে হবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করি, অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি তাদেরও সাম্প্রদায়িকতা বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, আজকে আনন্দের দিবস। আমরা একটা সংবিধান পেয়েছিলাম, আবার আমাদের একটা সংগ্রাম ছিল। সরকার ঘোষণা দিয়েছে এই দিবসটি জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হবে। আমাদের লড়াইটা সফল হলো তার জন্য আমরা আজকে আনন্দিত।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির স্কুলগুলোতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ধ্বংস করার সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের বেশভূষা আগের মতো নেই। মনে হচ্ছে আফগানিস্তানে আছি। আমাদের নারীদের বেশভূষা আপাদমস্তক বদলে গেছে। সুফিয়া কামালের যে দেশ ছিল, বেগম রোকেয়ার যে পোশাক ছিল, জাহানারা ইমামের যে পোশাক ছিল তারা তা পরবে না। আমরা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছি কিন্ত মনের দিক থেকে অনেক নিচে নেমে গেছি। এই বিষয়টা আমাদের ভাবতে হবে।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, এই সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা বিএনপি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে তা একেবারে মৌলবাদ হয়ে যাবে। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সমাজকর্মী ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন ধর্ম দিয়ে সম্পর্কে বণ্টন করা যায় না। তারই প্রমাণ ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের দুঃখ কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিনটিকে একটি পবিত্র দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমি অনুরোধ জানাবো এই বাহাত্তরের সংবিধান যেন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে যেন নিয়মিত চর্চা করা যায়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠ অবদান হলো এদেশে প্রতিষ্ঠা করা। আর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অবদান হলো এই রাষ্ট্রের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান তৈরি করে দেওয়া। আজকে সেই সংবিধান ফিরে এলেও যদি না আমাদের মনোজগতে পরিবর্তন ঘটে, যতদিন এই মনজগৎ থেকে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িকতার আধিপত্য নির্মূল করতে না পারবো ততদিন সংবিধানের সবকিছু থাকলেও কোনো কাজ হবে না।