প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:৫১
রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়? যাঁরা এই প্রশ্নটা করেন তাঁদের বলছি, রিজার্ভের টাকা গেল পায়রা বন্দরে। এ টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি। মানুষের কাজেই লাগছে, কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের আমদানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা কাজে লাগাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা পটুয়াখালী জেলার পায়রায় যুক্ত হয়ে ভার্চ্যুয়াল ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ আটটি জাহাজের উদ্বোধন, প্রথম টার্মিনাল ও ছয় লেনের সংযোগ সড়ক, বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং একটি সেতু নির্মাণ।
রিজার্ভের টাকা দেশের উন্নয়ন, আমদানি ও জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে, বলেন শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন পায়রা সমুদ্রবন্দরে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর তিনি এসব কথা বলেন।
রিজার্ভের টাকা দেশের জনগণের জন্য খাদ্য কেনায়, সার কেনায় গেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কেউ এই অর্থ আত্মসাৎ বা অপব্যবহার করেনি, বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য বন্দর পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করতে সক্ষম হবে এবং দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এর সুফল জাতি যুগ যুগ ধরে ভোগ করবে।
সরকারপ্রধান বলেন, সামান্য সার্ভিস চার্জে এই টাকা আসলে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ঘরের টাকা ঘরেই থাকছে, কেবল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হয়েছে।
নৌ রুট উন্নয়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও প্রাণবন্ত, শক্তিশালী ও উন্নত হবে।’
পায়রা বন্দরের নাম দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা বন্দর নামটি তাঁরই দেওয়া এবং তাঁর সরকার এখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে। এই বন্দরে কয়লার জাহাজ আনার মাধ্যমেই বন্দরের জাহাজ চলাচল শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর বহুদিনের ইচ্ছা ছিল নিজস্ব অর্থায়নে এটি করবেন। কারণ, বিদেশি অর্থে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। তিনি বলেন, যে কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের টাকা দিয়েই তিনি একটি ফান্ড তৈরি করেন।
যার নামও তিনি নিজেই রাখেন “বাংলাদেশ ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড”(বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল) এবং সেই ফান্ডের টাকা দিয়েই বন্দরের ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। রিজার্ভের টাকা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যয় করার জন্যই এই পদক্ষেপ বলেও জানান তিনি।
নাব্যতা রক্ষায় সরকার বন্দরগুলোতে নিজস্ব ড্রেজারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘প্রতিবছরই মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং আমাদের করে যেতে হবে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকার নদী ড্রেজিং করে এই নৌপথকে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায়। পাশাপাশি আসাম ও ভুটান পর্যন্তও এই নৌপথ চালু হতে পারবে। সরকার ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর নেপাল, ভুটান এবং ভারতকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এক পাশে মোহনা এবং এক পাশে চট্টগ্রাম বন্দর থাকায় এই পায়রা বন্দরও একসময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর ওপর অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।