প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ২৩:৪০
অন্ধকারে থাকবে না বাংলাদেশ
বাংলাদেশ আর অন্ধকারে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই রিঅ্যাক্টর ভেসেল স্থাপন কাজের উদ্বোধন করার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) বাস্তবায়ন আরো একধাপ এগিয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এগিয়ে গেল। এর ফলে পরমাণু যুগের স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে গেল। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ অন্ধকারে থাকবে না। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। যাতে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটও চালু করার আশা রাখি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়। পরমাণু ব্যবহার করা খুবই কঠিন। পরমাণু মানুষের কল্যাণের জন্য। বাংলাদেশ শান্তির জন্য এটা ব্যবহার করছে। এ প্রকল্প নির্মাণকালে সার্বিক নিরাপত্তার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যসহ সবকিছু মাথায় রেখেই নির্মাণ কাজ চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড পরিস্থিতির সময় ও রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করেনি। নিরাপত্তাসহ সব বিভাগেই কাজ অব্যাহত ছিল। সবার আন্তরিকতার কারণেই অত্যন্ত কঠিন এই কাজ আমরা করতে পেরেছি। এ কারণেই আজকের অগ্রগতি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সত্যিকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। যদিও ২০২১ সালে ১০ অক্টোবর প্রথম ইউনিটের প্রেসার ভেসেল স্থাপন করা হয়। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই আজ দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করা হলো। এজন্য আমি রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের কর্মকর্তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, এর মাধ্যমে জলবায়ু সম্মেলনের যে সিদ্ধান্তটা ছিলো, জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঝুঁকিটা এতে পরিবেশের কোনরকম কোনো প্রভাব পড়বে না। সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে মানুষকে দিতে পারব। আমরা এখনো প্রভাব পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করে যাচ্ছি। এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তা অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ হবে। এটা আমাদের কোন ক্ষতিই করবে না বরং মানুষ স্বচ্ছ একটা বিদ্যুৎ পাবে। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে একটি বড় অবদান রেখে যাবে। সে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়ে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মানুষই সবচেয়ে বেশি উপকারভোগী। শিল্প কারখানা এবং সেচ কাজ অথবা নিজের ঘরসহ সব কাজেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই বিদ্যুৎ কাজে লাগাতে পারবে। প্রথম ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট এবং দ্বিতীয় ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াটসহ মোট ২৪০০ মেগাওয়া ট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, এটা মোটেই কম কথা না। যা আমাদের দারিদ্র্য মুক্তি ও মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিরাট অবদান রাখবে। আমরা ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছি তা বাস্তবায়নে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। এর জন্য বন্ধু প্রতিম দেশ রাশিয়াকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ এবং রোসাটমকেও ধন্যবাদ। আজকে এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরাট অর্জনের দিন হিসেবে শনাক্ত হয়ে থাকবে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন করে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী ইয়া ফেস ওসমান, প্রশাসনের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান বক্তব্য রাখেন।