মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:১৭

জলবায়ু ইস্যুতে ধনী দেশগুলোর ভূমিকা দুঃখজনক : প্রধানমন্ত্রী

জলবায়ু ইস্যুতে ধনী দেশগুলোর ভূমিকা দুঃখজনক : প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু ইস্যুতে ধনী দেশগুলোর অর্থবহ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতাকে দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জলবায়ু খাতে কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী দেশগুলো জোরালো বক্তব্য দিলেও পরিস্থিতির গুরুত্বের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের (ইউএনজিএ) ফাঁকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এ খবর জানায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।

ধনী দেশগুলোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা শুধু কথা বলে, কিন্তু কাজ করে না। অথচ তারাই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।’

সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা ধনী ও উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব। তাদেরই এই ইস্যুতে এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু আমরা তাদের দিক থেকে সে ধরনের কোনো সাড়া পাচ্ছি না। এটাই দুঃখজনক।

‘আমি জানি- ধনী দেশগুলো আরও ধনী হতে চায়। তারা অন্যদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সংযোজন করে এএফপি মন্তব্য করেছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ঘন জনবসতিপূর্ণ ডেল্টা ও নিম্নাঞ্চলীয় বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।

‘বাংলাদেশ পৃথিবীকে উষ্ণায়নের জন্য দায়ী খুবই সামান্য পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে।’

প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করে টিকে থাকার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে ২০২০ সাল নাগাদ বছরে একশ’ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার মতে, ওই বছর বেসরকারি মাধ্যমসহ ৮৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থাটি পূর্বাভাসে জানিয়েছে, নভেম্বরে মিসরে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনটি সবচেয়ে বড় যে সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তা হলো- ধনী দেশগুলোকে অভিযোজন ও প্রশমন ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়-ক্ষতির জন্যও অর্থ দিতে হবে কিনা।

সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই যে তহবিলটি আরও বৃদ্ধি পাক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে ভাল সাড়া পাচ্ছি না।’

এএফপি জানিয়েছে যে ধনী দেশগুলো ২০২৪ সাল পর্যন্ত শুধু ক্ষয়ক্ষতির ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য সম্মত হয়েছে।

এ বছর ইউএনজিএ জলবায়ু সুবিচারের জন্য বার বার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও ছোট্ট দেশ ভানুয়াতুর নেতা জীবাস্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের ভয়াবহ বন্যায় তার দেশের এক-তৃতীয়াংশ প্লাবিত হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও একই ধরনের ভয়াবহ বন্যা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।

রোহিঙ্গা প্রশ্নে এএফপি মন্তব্য করেছে, বাংলাদেশ পশ্চিমের যে নিষ্ক্রিয়তা দেখছে তাতে জলবায়ুই একমাত্র ইস্যু নয়; রোহিঙ্গা সংকট আরেকটি বড় সমস্যা- করোনার প্রাদুর্ভাব ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যেখান থেকে ধনী দেশগুলোর মনোযোগ সরে গেছে।

আরো বলা হয়েছে, প্রতিবেশী মিয়ানমারে ২০১৭ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্মম অভিযানের কারণে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এ অভিযানকে যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছিল।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা এর আগের এক লাখসহ এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বিশ্ব বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি ও বর্তমানে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ঘটনায় সেখান থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরে গেছে।

‘যতক্ষণ তারা আমাদের দেশে আছে, আমরা মনে করি এটি আমাদের দায়িত্ব’- এমনটা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশি আশ্রয়দাতাদের ধৈর্য্য ক্ষীণ হয়ে আসছে।’

এএফপিও স্মরণ করেছে- জাতিসংঘের তৎকালীন মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাশেলে এই বছরের আগস্টে এক সফরে মন্তব্য করেছিলেন যে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব বাড়ছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় জনগণকে যথেষ্ট ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আমি বলব না যে তারা ক্ষুব্ধ, তবে তারা অস্বস্তি বোধ করছে। সব বোঝা আমাদের ওপর এসে পড়ছে। এটাই সমস্যা।’

আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই মুসলিম, যারা বাস করছে ত্রিপল, টিন ও বাঁশের তৈরি ছাউনি ঘরে।

ব্যাশেলে তার সফরকালে বলেছিলেন, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেনাশাসিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা নেই, যেখানে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। কিন্তু সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা আভাস দেন, ক্যাম্পে বসবাসের বাইরে রোহিঙ্গাদের অল্প কিছু বিকল্প আছে।

তিনি বলেন, ‘তাদের খোলা জায়গা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ তা তাদের নিজের দেশেই রয়েছে। তারা সেখানে ফিরে যেতে চায়। আর এটাই সবার মূল অগ্রাধিকার।

‘কেউ যদি তাদের নিতে চায়, তারা নিতে পারে’- এ কথাও যোগ করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়