প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২১
মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণায় নতুন কৌশল
মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) গ্রাহকদের টার্গেট করে নানা ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। এজন্য নিজেদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়া হয় অথবা ভুল নম্বরে টাকা চলে গেছে জানিয়ে ফেরত চাওয়া হয়। এ ধরনের প্রতারণা চলমান রেখেই নতুন আরেক ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে প্রতারকরা।
এবার তাদের টার্গেট গ্রাহক নয়, মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরা। অভিনব পন্থায় তারা এজেন্টদের হিসাব থেকে মুহূর্তের মধ্যে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এজন্য এজেন্টের মোবাইলের মতো হুবহু মোবাইল চোরাই মার্কেট থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে কৌশলে সেটি দোকানে রেখে ২-৫ মিনিটের মধ্যে ব্যালেন্সে থাকা সব টাকা ট্রান্সফার করে নেয়া হচ্ছে অন্য নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে।
টাকা ট্রান্সফারের জন্য পাসওয়ার্ডও সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশেষ কায়দায়। মোবাইলে গোপন ভিডিও রেকর্ডারের মাধ্যমে এজেন্টদের টাকা ট্রান্সফার ভিডিও করা হয়। পরে ওই ভিডিও দেখে পাসওয়ার্ড নিশ্চিত হয়ে ট্রান্সফার করে নেয়া হয় টাকা। এমনই অভিনব প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মিরপুর পশ্চিম শেওড়াপাড়া থেকে মাসুদ (২২) নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিরপুর জোনাল টিম। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতারণার এই নতুন ধরন সম্পর্কে জানতে পেরেছে সংশ্লিষ্টরা।
ডিবি বলছে, গত ২ বছর ধরে এ ধরনের শতাধিক প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের বাসিন্দা মাসুদ। তার ব্যবহৃত দুই সিমে ২ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো শতাধিক সিম জব্দ করা হয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন অপারেটরের সিম বিক্রির এজেন্টদের মাধ্যমে অন্যের নামে বিকাশ, নগদ ও রকেট একাউন্ট খোলা থাকা অবস্থায় কিনতেন মাসুদ। ডিবি সূত্র জানায়, মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়াসহ বিভিন্ন
এলাকা ঘুরে ঘুরে দোকান রেকি করতেন মাসুদ। পরে এজেন্টদের ব্যবহৃত মোবাইলের মডেল ও ব্যবহৃত কভার দেখে গুলিস্তান থেকে একই মডেলের চোরাই ফোন সংগ্রহ করে একই কভার লাগানো হতো। পরে ওই দোকানে গিয়ে গোপনে ভিডিও করে এজেন্টদের পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করা হতো। পাসওয়ার্ড নিশ্চিত হওয়ার পর অন্যকিছু কেনার ছলে দোকানদারকে ব্যস্ত রেখে মোবাইল বদল করে ফেলা হতো। এরপর দোকান থেকে বেরিয়ে ২-৫ মিনিটের মধ্যে সব টাকা ট্রান্সফার করে নেয়া হতো।
ডিবি আরো জানায়, প্রতারণার টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করে আসছিলেন মাসুদ। পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে এসি রুমে থাকতেন তিনি। ব্যবহার করতেন দামি মোবাইল ও মোটরসাইকেল। বেশভূষাতেও থাকতো আভিজাত্যের ছাপ।
এদিকে, প্রতারণার বিষয়ে মো. আসাদুজ্জামান নামে এক এজেন্ট অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামি করে মিরপুর মডেল থানায় গত রবিবার একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২ সেপ্টেম্বর ৩ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মিরপুরের উত্তর পীরেরবাগ কামালের মোড়ে অবস্থিত জুঁই এন্টারপ্রাইজ নামের দোকানে এসে বিক্রির জন্য রাখা লাইট দেখাতে বলে। তাদের লাইট দেখানোর সময় একজন একটি লাইট দিতে বলেন। এ সময় অন্য আরেকজন আরেকটি লাইট দেখাতে বলেন। ওই ব্যক্তিকে লাইট দেখাতে গেলে লাইট নিতে চাওয়া ব্যক্তি আমার দোকানে থাকা বিকাশ ও নগদ ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে যায়। আর অন্য দুজন দুটি লাইট কিনে চলে যায়। তারা চলে যাওয়ার পর ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত হুবহু আরেকটি মোবাইল দেখতে পাই। কিন্তু সেটি নষ্ট অবস্থায় ছিল। পরে বুঝতে পারি সেটি আমার মোবাইল নয়। এরপর বিকাশ ও নগদ অফিসে ফোন করে জানতে পারি আমার দুটি এজেন্ট নম্বর থেকে ৭২ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিবির মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, মাসুদ একদম ভিন্ন কৌশলে এজেন্টদের টাকা হাতিয়ে আসছিলেন। এই কাজে তিনি চোরাই মোবাইল এবং অন্যের নামে বিকাশ, নগদ ও রকেট একাউন্ট খোলা সিম ব্যবহার করতেন। ফলে তাকে গ্রেপ্তারে বেগ পেতে হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। গতকাল তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এডিসি আরো বলেন, এ ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে এজেন্টদের উচিত সাবধানে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। পাশাপাশি সিম কোম্পানিগুলোর উচিত হবে একটিভ সিম মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলা অবস্থায় বিক্রি বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া। তাহলেই এ ধরনের প্রতারণা কমে আসবে।