রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২২, ০৮:১৩

‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো’ গানের গীতিকার কে জি মোস্তফা আর নেই

‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো’ গানের গীতিকার কে জি মোস্তফা আর নেই
অনলাইন ডেস্ক

‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’, ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’ এর মতো অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকবি, খ্যাতিমান কলামিস্ট, কবি ও সাংবাদিক কে জি মোস্তফা আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

গতকাল রোববার (৮ মে) দিনগত রাত ৮টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রাত আটটায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার (৯ মে) বাদ যোহর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কে জি মোস্তফার মরদেহ জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে আনা হবে। সেখানে তার জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান হাফিজ জানান, ‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’ এবং ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’- এসব বিখ্যাত ও জনপ্রিয় গানের গীতিকার কে জি মোস্তফা চলে গেলেন। তিনি কলামিস্ট ও কবি হিসেবেও খ্যাতিমান ছিলেন।

গুণী এ মানুষটি অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা। বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী এবং জনপ্রিয় দুই গান ‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’ এবং ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’-এর গীতিকার তিনি। প্রথম গানটি এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’ এবং দ্বিতীয় গানটি অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘নাচের পুতুল’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি গানেরই সুর করেছেন রবিন ঘোষ। প্রথম গানটি গেয়েছেন তালাত মাহমুদ। দ্বিতীয়টি গেয়েছেন মাহমুদুন্নবী।

অসংখ্য নন্দিত ও জনপ্রিয় গানের গীতিকার কে জি মোস্তফার জন্ম ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

গীতিকার হিসেবে পরিচিতি থাকলেও কে জি মোস্তফা একজন সফল সাংবাদিক এবং কলামিস্ট ছিলেন। ১৯৫৮ সালে দৈনিক ইত্তেহাদে শিক্ষানবিশ হিসেবে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। ওই বছরই ‘দৈনিক মজলুম’-এ সহ-সম্পাদক পদে নিয়োগ পান এবং পত্রিকাটির বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত বহাল ছিলেন। দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে ১৯৬৮ সালে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন সাপ্তাহিক জনতায়।

১৯৬০ সাল থেকে চলচ্চিত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে তার লেখা প্রচুর গান প্রচারিত হয়। হাজার গানের গীতিকার কে জি মোস্তফার ফিল্মি গানগুলো খুবই জনপ্রিয়। তার গানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী তালাত মাহমুদ এবং বাংলাদেশের খ্যাতিমান প্রায় সব শিল্পী কণ্ঠ দেন। একসময় তিনি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনার দিকেও ঝুঁকেছিলেন। ‘মায়ার সংসার’, ‘অধিকার’ ও ‘গলি থেকে রাজপথ’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজও করেন।

কবি, গীতিকার, সাংবাদিক কে জি মোস্তফার সৃজনশীলতা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সুধীজনদের প্রাণবন্ত আলোচনা নিয়ে জ্যোতি প্রকাশন ‘একজন কে জি মোস্তফা’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করেছে।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কে জি মোস্তফা প্রথমে ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’, পরে ‘দৈনিক স্বদেশে’ চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ‘দৈনিক জনপদে’ কূটনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। ওই সময় ‘নূপুর’ নামে একটি বিনোদন মাসিকও সম্পাদনা করতেন তিনি। ১৯৭৬ সালে বিলুপ্ত সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিক হিসেবে বি.সি.এস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত হন এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে সম্পাদক, পরে জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হন।

কে জি মোস্তফার লেখা প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘কাছে থাকো ছুঁয়ে থাকো’, ‘উড়ন্ত রুমাল’, ‘চক্ষুহীন প্রজাপতি’, ‘সাতনরী প্রাণ’, ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’, ‘এক মুঠো ভালোবাসা’, ‘প্রেম শোনে না মানা’। গদ্যগ্রন্থ- কোথায় চলেছি আমি (সরস আত্মকাহিনী), ছড়ার বই- ‘শিশু তুমি যিশু’, ‘কন্যা তুমি অনন্যা’, ‘মজার ছড়া শিশুর পড়া’। এছাড়াও তার বেশ কিছু গানের সিডি ও ক্যাসেট রয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগ কৃর্তক পদক ‘দেশবরেণ্য গীতিকার’ পদকসহ বহু পদকে ভূষিত হয়েছেন কৃতিমান এ ব্যক্তিত্ব।

সূত্র: জাগো নিউজ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়