প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২২, ১০:১৫
একই ভাতা-সম্মানী পাবেন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম রোধ, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও ব্যয়ের সমতা আনতে শিক্ষকদের বাড়তি কাজের ভাতা এবং সম্মানী নির্ধারণ করা হচ্ছে। শিক্ষকদের পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন, খাতা মূল্যায়ন, সিন্ডিকেট সদস্যসহ সব কমিটির সদস্যদের সম্মানী কত হবে তা থাকবে নির্দিষ্ট। সব ধরনের ভাতা এবং সম্মানী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য হবে এক ও অভিন্ন।
এ লক্ষ্যে ‘অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল’ নামে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
খসড়া নীতিমালায় দেখা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সাধারণ নীতিমালা হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করা হবে। জাতীয় পে-স্কেলের বাইরে এতে শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের অর্থপ্রাপ্তি ও পরিশোধ, হিসাব পরিচালনা, পরিচালনা বাজেট, উন্নয়ন বাজেট, আয় বৃদ্ধি ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, বেতন-ভাতা পরিশোধ, পদ সৃষ্টি ও পদ পূরণ, গবেষণা প্রকল্প, ইনস্টিটিউট বা সেন্টারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা, মালামাল/সেবা ক্রয়, মালামাল ব্যবস্থাপনা, ভ্রমণভাতা ও দৈনিক ভাতা, অগ্রিম সমন্বয়, হিসাব সংরক্ষণ, নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ এবং সেবা গ্রহণ, জামানত রক্ষণাবেক্ষণ, বার্ষিক হিসাব, হিসাব নিরীক্ষা, সম্মানী/ভাতা/পারিতোষিকের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। ৬৯ পৃষ্ঠার এই নীতিমালাটি গত ৭ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ নীতিমালা প্রণয়নে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অন্যদের মধ্যে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকদের (অর্থ) রাখা হয়েছে। ১১ সদস্যের এ কমিটি চার দফায় সভা করে চূড়ান্ত করেছে নীতিমালার খসড়া।
জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আর্থিক শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গত বছরের জুনে ইউজিসির ৪১তম মাসিক সভায় একটি নীতিমালা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এর আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে। নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে সেটি পাঠানো হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
নীতিমালায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও সেমিস্টার পরীক্ষায় দুই ঘণ্টায় শিক্ষকদের সম্মানী ৮শ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চার বছরের অনার্স সম্মান কোর্সের ক্ষেত্রে দুই ঘণ্টার পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ৬০ টাকা, তিন ঘণ্টার ক্ষেত্রে ৮০ টাকা, চার ঘণ্টার ক্ষেত্রে প্রস্তাব করা হয়েছে ১০০ টাকা। এক বছরের মাস্টার্স কোর্সের দুই ঘণ্টার পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ৭০ টাকা, তিন ঘণ্টার জন্য ১০০ ও চার ঘণ্টার পরীক্ষার খাতার জন্য ১২০ টাকা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যদের সম্মানী চার হাজার থেকে বাড়িয়ে চার হাজার পাঁচশ টাকা নির্ধারণ করেছে ইউজিসি।
এর বাইরে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনারিয়াম (বিশেষ কাজের ভাতা), পাবলিক প্রকিউরমেন্ট নীতিমালা তৈরি, অগ্রিম আদায় পদ্ধতি, উন্নয়ন কাজের ব্যয় সমন্বয়, সব সভা ও কমিটির সম্মানী নির্ধারণ করা হয়েছে এই নীতিমালায়।
নীতিমালার বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী চূড়ান্ত করার পর সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর সেটি যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হতে পারে।
তিনি বলেন, আর্থিক অভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম রোধ, অর্থের অপচয় বন্ধ, বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার, আর্থিক শৃঙ্খলা ও অর্থ ব্যয়ের জবাবদিহি নিশ্চিত করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনয়নে অনেকাংশে সহায়ক হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ