প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২২, ১৭:৫৯
জন্মদিন পালনের কথা বলে নারী চিকিৎসককে হোটেলে নেন রেজা : র্যাব
জন্মদিন পালনের কথা বলে নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাইম সিদ্দিকীকে রাজধানীর পান্থপথের আবাসিক হোটেলে নেন তার সঙ্গী রেজাউল করিম ওরফে রেজা। হোটেলে রুমে ঢোকার পরে তাদের মধ্যে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় রেজা তার সাথে থাকা ব্যাগ থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জান্নাতুলের শরীরে আঘাত করে। পরবর্তীতে জন্নাতুলের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
আজ শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-২ এবং র্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকার একটি মেস থেকে রেজাউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল, ব্যবহৃত ব্যাগ ও জান্নাতুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
রেজাউল (৩১) কক্সবাজারের মৃত নবী হোসাইনের ছেলে। রেজাউল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করে। এমবিএ চলাকালে সে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এরপর সে একটি বেসরকারি ব্যাংকেও কর্মরত ছিল। ২০২২ সালে জুনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করে রেজাউল।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার পর কলাবাগান থানায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। র্যাব এ ঘটনার পর থেকে ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং অপরাধীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে জান্নাতুলের মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় রেজাউল। সেই মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাতুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে রেজাউল। রেজাউলের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৯ সালে তাদের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা পালিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করে। পরিবারের অমতে তার সাথে ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে বিভিন্ন নারীর সাথে রেজাউলের সম্পর্কের বিষয়ে জান্নাতুল জানতে পারেন। এ নিয়ে তার সাথে প্রতিনিয়ত কথা বাগ-বিতণ্ডা হতো। তারপরও তার সাথে সম্পর্ক রেখে গিয়েছিল জান্নাতুল।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরও জানায়, এরই মধ্যে রেজাউল তার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে জান্নাতুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সে তার ব্যাগে ধারালো চাকু নিয়ে চলাফেরা করতো। গত ১০ আগস্ট জান্নাতুলের জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে পান্থপথে ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট’ নামক আবাসিক হোটেল নিয়ে যায় রেজাউল। হোটেলে রুমে ঢোকার পরে তাদের মধ্যে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তর্কাতর্কি হয়। তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে রেজা তার সাথে থাকা ব্যাগ থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জান্নাতুলের শরীরে আঘাত করে। পরবর্তীতে জন্নাতুলের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যার পর রক্তমাখা জামা পরিষ্কার করে হোটেলে গোসলের সারে রেজাউল। এরপর দরজার বাইরে থেকে সে রুমের তালা বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় সে ওই চিকিৎসকের মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে রেজাউল জানায়, ধস্তাধস্তির কারণে সে হাতে কিছুটা আঘাত পায়। হোটেল থেকে বের হয়ে সে প্রথমে তার মালিবাগের বাসায় যায়। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে হাতের ক্ষত স্থান সেলাই করে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। পরবর্তীতে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে আত্মগোপন করে। সেখান থেকেই র্যাবের অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে বুধবার রাতে কলাবাগান থানা পুলিশ ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের একটি আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ থেকে জান্নাতুল নাইম সিদ্দিকীর মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি মগবাজার কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গাইনী বিষয়ক একটি কোর্সে অধ্যয়ন করছিলেন।
জানা যায়, তার বাসা রাজধানীর শাজাহানপুরে। গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। বুধবার সকাল ৮টায় রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওই আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন তিনি।
এ ঘটনায় নিহত জান্নাতুলের বাবা শফিকুল আলম বাদী হয়ে রেজাউল করিম ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেন।
সূত্র: দেশ রূপান্তর