প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২২, ১৪:২৫
যুবসমাজকে খেলাধুলা-সমাজসেবায় আন্তরিক হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
যুব সমাজকে খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ও সমাজসেবায় আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নগরীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ আগস্ট শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী। আগস্ট মাস আমাদের শোকের মাস। ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কালো অধ্যায়। যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, রাষ্ট্র পেয়েছি, জাতি হিসেবে আত্ম-পরিচয় পেয়েছি, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে যিনি অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাকে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, খেলাধুলা আমদের একটা পারিবারিক ঐতিহ্য। আমার দাদা ও ছোট দাদা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন, আমার আব্বাও (বঙ্গবন্ধু) ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। খেলাধুলায় আমাদের যুব সমাজ যেন আরও সম্পৃক্ত হয়, তার জন্য তিনি (বঙ্গবন্ধু) উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে কামালের জন্মদিন। কামাল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিল। একাধারে সে হকি খেলতো, ফুটবল খেলতো, ক্রিকেট খেলতো। ভালো গান গাইতে পারত। নাটকে অংশ নিত, উপস্থিত বক্তৃতায় পুরস্কার পেত। তার রাজনৈতিক সচেতনতা ও দূরদর্শিতা ছিল। ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আমরা সবাই সংগঠন করতাম। কিন্তু পদ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা ছিল না।
তিনি বলেন, কামাল সব সময় অত্যন্ত সাধাসিধাভাবে চলাফেরা করতেন। তার পোশাক পরিচ্ছদ, জীবনযাত্রা খুবই সীমিত ছিল। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে তার কোনো অহমিকা ছিল না।
শুধু একজন ক্রীড়াবিদ না, রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তার অনেক দূরদর্শিতা ছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কামাল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতে যে অবদান, সেটা সবার মনে থাকবে। সঙ্গে সঙ্গে আমি চাই-আমাদের দেশের যুব সমাজও খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ও সমাজসেবায় যেন আন্তরিক হয়। তারা যেন নিজেদেরকে আরও সম্পৃক্ত করে সেটাই আমার আকাঙ্ক্ষা। সেজন্য আমরা যখন সরকারে এসেছি, তখন চেষ্টা করেছি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতকে আরও উন্নত করতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চার জগতে সম্পৃক্ত থাকেন তাদের কারও কারও জীবন একটা সময় খুব দুর্বিষহ হয়ে যায়। শেখ কামালই প্রথম ক্রীড়া জগতে সম্পৃক্তদের সহযোগিতার জন্য ফান্ড গঠন করেছিল। আমি সরকারে আসার পর তাদের জন্য বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে দিয়েছি, সিড মানি দিয়েছি এবং আরও ফান্ড জোগাড় করে দেবো যেনও তাদেরকে আর কষ্ট করতে না হয়।
তিনি বলেন, একটা বয়স আসলে তাদের আর অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে না, সেটা যেন না হয় আমরা ব্যবস্থা নেব। খেলোয়াড়দের জন্য যেমন কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে, সাংস্কৃতিক জগতের জন্যও আমরা করে দিয়েছি। শিল্প-সংস্কৃতির জগতের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড করে আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কাজেই যেকোনও আপদকালীন সময়ে তারা যেন চিকিৎসা বা অন্যকোনো সহযোগিতা পায় এই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল যে নীতি, আদর্শ, কর্মপন্থা, দিক-নির্দেশনা রেখে গেছেন, আমি মনে করি তা অনুসরণ করে আমাদের শিশু ও যুব সমাজ নিজেদেরকে গড়ে তুলবে। শুধু নিজের দেশের জন্য না, মেধা-মনন বিকশিত করে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যেনও আমরা বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারি সেভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করবে- সেটাই আমি চাই।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এরআগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের মর্যাদাপূর্ণ শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) পুরস্কারের জন্য সাতটি বিভাগে নয়জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং দুটি সংস্থাকে মনোনীত করে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতবছর থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।