প্রকাশ : ২০ জুন ২০২২, ১২:০৬
আ.লীগ নেতা টিপু হত্যা: লক্ষ্য এবার শামীমকে দেশে ফেরানো
রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৫) হত্যা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এ মামলার ১৬ আসামিকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছে ‘কিলিং মিশন’ সম্পর্কে সব কিছু স্পষ্ট হয়ে উঠে। দেশে থেকে সরাসরি হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রধান পাঁচজনকে রিমান্ডে এনে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এবার এই খুনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মোটরসাইকেলচালক মোল্লা শামীমকে যে কোনো মূল্যে গ্রেফতার করতে চায় মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তারা অনেকটাই নিশ্চিত যে শামীম ভারতে আছে। এখন পুলিশ তার পাসপোর্ট খুঁজছে। তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেলেও পাসপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় ছবি দিয়েই তাকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ‘আইডেন্টিফিকেশন ডকুমেন্ট’ পেলেই পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ভারতের সঙ্গে পুরোদমে যোগাযোগ শুরু করবে। এর আগে শামীমের ভুটানে থাকার খবরে সেখানকার পুলিশকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানায় এনসিবি ঢাকা। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, টিপু হত্যার মামলাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছেন তারা। এ ঘটনার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হলে যেসব নাম আসছে প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে চান তারা। এর মাধ্যমে আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদেরও একটি বার্তা দিতে চায় পুলিশ। সে কারণেই ওমান থেকে হত্যার সন্দেহভাজন সমন্বয়কারী সুমন সিকদার মুসাকে ফেরানোর পর এবার তাদের চোখ শামীমের দিকে। কারণ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত অস্ত্রটি কয়েক হাত বদল হয়ে শামীমের কাছেই ছিল। ফলে অস্ত্রের বিষয়ে শামীম ছাড়া অন্যরা তেমন কোনো তথ্য দিতে পারছে না। পাশাপাশি এ ঘটনায় গ্রেফতার ১৬ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্যগুলো আবার যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এভাবে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অনেক বিষয়েই তারা নিশ্চিত। এরপরেও শামীমকে ফিরিয়ে এনে বিষয়গুলো সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা। সেজন্যই ভারতে তার অবস্থান জানতে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিতেও একাধিক কর্তৃপক্ষকে তিন দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক মহিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের কাছে শুরুতে তথ্য ছিল মোল্লা শামীম ভুটানে আছে। তখন ভুটানকে এ বিষয়ে আমরা জানিয়ে রেখেছিলাম।
এরপর ভারতে অবস্থানের বিষয়টি আমরা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারিনি। তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে এখন আমাদের প্রয়োজন ‘আইডেন্টিফিকেশন ডকুমেন্ট’ অর্থাৎ পাসপোর্ট বা ছবি। সেটা পেলে আমরা জোরালোভাবে যোগাযোগ শুরু করব। কারণ এই ডকুমেন্ট পেলে তাকে ট্র্যাক (শনাক্ত) করা সহজ হবে। তিনি আরও বলেন, তবে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে থাকলে শনাক্ত করা কঠিন। তখন ছবি দিয়ে শনাক্তের চেষ্টা করা হবে। যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে, তাই যোগাযোগও সহজ হবে। ডিবি সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পেলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তখন এ বিষয়ে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারব।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এ হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসাবে জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত তারা মতিঝিলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিই পেয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের বেশ কয়েকজন এর পেছনে মতিঝিল এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া পূর্বের কয়েকটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিনের বৈরিতার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। তবে হত্যায় জড়িত অন্তত তিনজনের টিপুর সঙ্গে সরাসরি কোনো বৈরিতা ছিল না বলে জানা গেছে। এরপরেও তারা কেন এ প্রক্রিয়ায় জড়িত হলো সেটি জানার চেষ্টা চলছে। রিমান্ডে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের অনেকেই বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি ও জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিকের সম্পর্কে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। পুলিশকে কিছু তথ্য দিলেও তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। বিশেষ করে একাধিক ব্যক্তি জিসানের রোষানলে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তবে ডিবি তাদের অভয় দিয়ে পুরো চক্রটিকে ধরার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানা গেছে।
২৪ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় সড়কে গুলি করে খুন করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলামত খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল এখনো উদ্ধার হয়নি। তবে সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া ইশতিয়াক আহমেদ জিতুকে গ্রেফতার করেছে ডিবি।
সূত্র: যুগান্তর