প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২২, ১৮:০৫
‘স্বাস্থ্য বাজেটের আকার বাড়াতে হবে’
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য বাজেটের আকার বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে যে বাজেট দেওয়া হচ্ছে, তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘কেমন হলো স্বাস্থ্য বাজেট ২০২২-২৩’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, কিছু প্রকল্প সম্প্রসারণ ছাড়া স্বাস্থ্য বাজেটে নতুনত্ব নেই। বরাদ্দের বৃদ্ধি মূলত ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং মুদ্রাস্ফীতির ব্যবস্থা মেটাবে। করোনার মতো মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়াতে বাজেটে বরাদ্দ নেই।
তিনি বলেন, আগের বছরের বাজেটের চেয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে পরের বছরের বাজেট তৈরি করেন। অনেক খাতে বরাদ্দ বাড়লেও ব্যয়ের সক্ষমতা ও দক্ষতা নেই। এ কারণে বাজেট অব্যবহৃত থেকে যায়। এসব বিষয় সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতে এ বরাদ্দ ১০ শতাংশ হওয়া উচিত। দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮ শতাংশই আসছে জনসাধারণের পকেট থেকে। এই ব্যয় (আউট অব পকেট) ৫০ শতাংশে আনতে হলে জাতীয় বাজেট ৭-৮ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন।
হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের বিশ্লেষণে বলা হয়, দেশের নাগরিকরা স্বাস্থ্য সেবা পেতে পকেট থেকে যে ৬৮ শতাংশ ব্যয় করেন, তার মধ্যে ওষুধ ও পচনশীল (এমএসআর) চিকিৎসাসামগ্রী কিনতে ব্যয় হয় ৬৭ শতাংশ। ৫ শতাংশ ব্যয় হয় ইমেজিং সেবা পেতে, ৭ শতাংশ ব্যয় হয় ল্যাবরেটরি সেবা পেতে, ইনপেশেন্ট কিউরেটিভ সেবা পেতে ব্যয় হয় ৮ শতাংশ এবং আউটপেশেন্ট কিউরেটিভ সেবা পেতে ব্যয় হয় ১৩ শতাংশ।
গড়ে দেশের অসুস্থ বা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত নাগরিকদের মধ্যে ১২ শতাংশ কোন আনুষ্ঠানিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেন না। আউট পেশেন্টদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে যান। অন্যদিকে ৪০ শতাংশের বেশি ইনপেশেন্ট বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস (বিএনএইচএ) এর ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দ মাথাপিছু পড়ে মাত্র ৪৫ ডলার। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত, ভুটান এবং শ্রীলংকায় যথাক্রমে বরাদ্দ ৫৮, ৭৩, ১০৩ ও ১৫৭ ডলার। অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ নেপালের তুলনায় আমাদের বরাদ্দ ১৩ শতাংশ কম।
তাই জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে রোগীদের পকেট থেকে ব্যয় ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে যেন রোগীরা দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র না হয়ে পড়েন বাজেটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য খাতের সাংবাদিকরা।
গত অর্থবছরের তুলনায় স্বাস্থ্য বাজেট কম বেড়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, গত বছরের মত বা তার চেযে বেশি হওয়া উচিত। করোনার কারণে অনেক কাজ গত বছর করতে পারিনি এবার তা করতে চাই।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ খাতে থোক বরাদ্দ এবার কমেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা প্রতিরোধে হেলথের ব্লক ফান্ড গত বছর ১০ হাজার কোটি টাকা ছিল। সেটা এবার কমে পাঁচ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। মোট হেলথের বাজেটের আকার ৪০ হাজার কোটি টাকা হবে। কারণ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও হেলথের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এ সময় অন্যান্য মন্ত্রণালযের চেয়ে বাজেট ইমপ্লিমেন্টেশনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পিছিয়ে বলে স্বীকার করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজের সমন্বয় করায় সময় বেশি লাগে। ফলে বাজেটের কিছুটা অংশ অব্যাবহিত থেকে যায়। প্রতিটি ক্রয় কার্যক্রমে আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় নিতে হয়। এতে সময় লাগে। আমাদের প্রক্রিয়াগুলো লম্বা, ঠিকাদার নিয়োগসহ নানা কারণে সময় বেশি লাগে। অনেক সময় ঠিকাদাররা কাঁচামালের দাম বাড়া ও কমার সঙ্গে কাজের সময় নির্ভর করে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম, টিকা কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক প্রমুখ।
সূত্র: যুগান্তর