প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২২, ১০:৪৪
পদ্মা সেতু থেকে বছরে টোল আসবে ১৬০৪ কোটি
পদ্মাসেতু থেকে মাসে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বছরের হিসেবে তা হবে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও নির্মাণ খরচের ঋণ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। কোনো উন্নয়ন সহযোগী বা প্রতিষ্ঠানকে নয়, স্বয়ং বাংলাদেশ সরকারকে ৩৫ বছরে সুদসহ ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মিত। এর পুরোটাই সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ঋণ হিসেবে গ্রহণ করেছে। চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ মোতাবেক ঋণের অর্থ প্রকল্প সমাপ্তির পর বার্ষিক ১ শতাংশ হারে সুদসহ ৩৫ বছরে ১৪০ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া নকশা প্রণয়নের সময় নেওয়া ২১১ কোটি টাকার বিপরীতে ৩৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে ।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। আগামী ৩৫ বছরে সরকারকে সুদে আসলে ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ঋণ পরিশোধ, সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, নদীশাসন এবং আদায়কৃত টোলের ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ অর্থ পরিশোধ করার জন্য টাকা প্রয়োজন। এসব টাকা সেতুতে চলাচলকারী যানবাহনের উপর টোল আরোপ করে উঠানো হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ফেরি পারাপারের বিদ্যমান টোল হারকে ভিত্তি ধরে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির মাধ্যমে মাওয়া-জাজিরা রুটে ফেরিতে বর্তমানে চলাচলকারী যানবাহনের (নভেম্বর ২০২০ এর তথ্য অনুযায়ী) আদায়কৃত টোল হার অনুযায়ী মাসে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বছরে ৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা আদায় হয়। এর দেড়গুণ হলে মাসে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা হিসেবে বছরে ১০৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা টোল আদায় হওয়ার কথা।
অন্যদিকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১০ সালে দাখিলকৃত পদ্মা সেতুর ডিটেইলড ইকোনমিক অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস সম্বলিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ট্রাফিক ফোরকাস্ট হিসেবে ফেরির টোল হারের দেড়গুণ হিসেবে মাসে টোল আদায় হবে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সরকার আশা করছে বছরে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা টোল আদায় হবে।
সূত্র জানায়, অর্থ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে সম্পাদিত ঋণ চুক্তিতে উল্লিখিত ৩৫ বছর মেয়াদি লোন রিপেমেন্ট সিডিউল অনুযায়ী, সেতুতে যানবাহন চলাচলের প্রথম বছরেই ৫৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এটা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে কোনো কোনো বছর ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যয়, নদীশাসন, ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধ সবই করতে হবে টোলের টাকা থেকে। টোল আদায়ের ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মোটরসাইকেলের টোল ১০০ টাকা, বড় বাসের টোল ২ হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি ধরনের বাসের টোল ২ হাজার টাকা, কার ও জিপের ৭৫০ টাকা, চার এক্সেল টেইলারের ৬ হাজার টাকা, মাইক্রোবাস ১৩০০ টাকা এবং মিনিবাসের (৩১ সিট বা তার কম) টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪০০ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (সচিব) মো. মনজুর হোসেন বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করেছি। সুদসহ সরকারকে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে যা টোল আদায় থেকে আসবে। সরকারের কাছে আমাদের ঋণ, ফেরির ভাড়া ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র: জাগো নিউজ