প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৯
শিক্ষকদের বাধা, ভিসির বাসভবনে তালা না ঝুলিয়েই ফিরলেন শিক্ষার্থীরা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভাইস চ্যান্সেলরের বাসভবনে তালা দিতে গিয়ে তালা না ঝুলিয়েই ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভিসির বাসভবনে তালা দিতে যান শিক্ষার্থীরা। বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা দিতে গেলে ভবনের ভেতরে থাকা শিক্ষকরা বেরিয়ে আসেন এবং বাধা দেন। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে তালা না দিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ভিসি মাছুদকে আমরা বর্জন করেছি। প্রশাসনের ওপর আমরা আস্থা রাখি না, তারা আমাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারেনি। এই ভিসিকে আমরা সবাই বর্জন করেছি, তাই ভিসির বাসভবনে কেউ থাকতে পারবে না। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সব শিক্ষার্থী মিলে ভিসির বাসভবনের তালা মেরে দিয়েছিলাম। কিন্তু গতকাল রাত ১১টার সময় আমাদের কাছে খবর আসে যে ভিসির বাসভবনের তালা ভাঙা হয়। গতকাল প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দিয়েছিলাম আজ সকাল সাড়ে ১০টার ভেতরে যেন ভিসির বাসভবন খালি করে দেওয়া হয়।
তারা বলেন, কুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিরাপত্তার স্বার্থে চলে গেছে। তারপরেও আমরা আছি তাই হল খোলা আছে, একাডেমিক কার্যক্রম আমরা বন্ধ রেখেছি।
এদিকে বাসভবনের প্রধান ফটকে ভেরত থেকে তালা লাগানো ছিল আগে থেকেই। পরে কর্মচারীরা তালা খুলে দিলে শিক্ষকরা বেরিয়ে এসে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
কুয়েটের অধ্যাপক আশরাফুল গনি ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদের দাবি বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশাসন কাজ করছে, আমরাও কাজ করছি। কিন্তু কিছু কিছু ছাত্র তাদের সীমা অতিক্রম করছে। তারা ছাত্রদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে, আমাদেরকে বিভিন্নভাবে গালিগালাজ করছে। এটা তারা করবে কখনো আশা করিনি। আমি ১৯৯১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ছিলাম। এখানকার শিক্ষক হয়েছি, রাতদিন এখানে কাজ করছি। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করছি। ছাত্রদের সমস্ত দাবি মানার জন্য ভিসি এবং আমরা রাতদিন কাজ করছি। তাদের দাবির সঙ্গে আমরা সহমত প্রকাশ করছি। এরপর তারা আমাদের বাসায় আসবে, তালা দেবে, আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে এটা আমরা পছন্দ করছি না। আমরা ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছি তোমাদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত। দাবি যদি পূরণ না হয় তারপর ভিসি, প্রো-ভিসির পদত্যাগের বিষয়। আমরা দেখছি ভিসি, প্রো-ভিসি ছাত্রদের প্রত্যেকটা দাবির বিষয়ে কাজ করছে, তাদেরকে তো কাজ করতে দিতে হবে। এতটুকু সময় ধৈর্য্য ধারণের জন্য আমরা ছাত্রদের আহ্বান জানাচ্ছি। তারা যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে, আমরা আবাসিকে পরিবার নিয়ে থাকি সেখানে যেন না আসে। তাদের সব দাবি পূরণ হোক এটা আমাদেরও প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আমরা আহ্বান করেছি তারা যেন আবাসিকে না আসে। তারা তাদের দাবি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। তাদের আর আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে কিনা জানি না। আমরা তো দেখছি ভিসি রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে। হলে এক সময় যে পরিবেশ ছিল, এখন অনেক ভালো পরিবেশ আছে। আমরা ভালো রিপোর্ট পাচ্ছি, তাহলে কেন তোমরা ভিসির পদত্যাগ চাচ্ছো। ভিসি যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে একমত হব।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, যেখানে প্রশাসন ছাত্র শিক্ষক সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, আমরা সুন্দরভাবে ক্যাম্পাসকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, ক্যাম্পাসকে পুনর্গঠন করছি। যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছি, তখন সমাধানের দিকে ফোকাস না করে কিছু কিছু ছাত্র পেছন দিক থেকে, মিডিয়ায় যৌক্তিক কথাগুলো এড়িয়ে অযৌক্তিকভাবে আল্টিমেটাম দিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। ছাত্ররা এখন আসছে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হলো না কেন? এর জন্য ভাইস চ্যান্সেলরকে পদত্যাগ করতে হবে। এর জন্য শিক্ষকদেরকে জবাব দিতে হবে। এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্বে সরকার আছে, ছাত্ররা সরকারের কাছে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউন্ডারির মধ্যে কাজ করে এটাতো কারও অজানা নয়। বাউন্ডারির বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করল নাকি করল না সে ব্যাপারে চাপ দিচ্ছি। এখানে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। আজকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের ডেকেছেন এই জিনিসগুলো আপডেট করার জন্য। সেখানে ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশ্নের বিষয়ে সিনিয়র শিক্ষকরা ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে। আমরা সেগুলো জানার চেষ্টা করছি, সেই অনুযায়ী পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন কাজ করছে না, কেন কাজ করল না আমাদের তরফ থেকে আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করছি। এই অবস্থায় ছাত্ররা এসে এভাবে চড়াও হবে, শিক্ষকরা কোনভাবে মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, আমরা তো ছাত্রদের নিয়েই কাজ করছিলাম, ছাত্ররাও আমাদেরকে ফিডব্যাক দিচ্ছে। ছাত্ররা বলছে-স্যার আমাদের মধ্যে অনেক গ্রুপ আছে, আমরা বুঝছি যে অনেক কাজ করছে কিন্তু আমরা আমাদের মধ্যে সমন্বয় করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আমাদের ক্যাম্পাস স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসুক। আমাদের কাছে ছাত্ররা ব্যক্ত করেছে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এটা আমাদের মূল বিষয়, যেখানে বাহিরের পক্ষ জড়িত হয়ে গেছে। আমরা আমাদের ছাত্রদেরকে ক্যাম্পাসে ফেরালে কিভাবে নিরাপত্তা দিতে পারব, আমাদের কি করনীয় আছে। আমরা যখন সেই জিনিস নিয়ে ভাবছি তখন গুটি কয়েক ছেলে এসে এই পরিবেশটাকে আবারও অশান্ত করার চেষ্টা করছি। আমরা চাচ্ছি সামনে এগোতে, কিন্তু কিছু ছেলে এসে সেই পুরাতন এজেন্ডা নিয়ে এসে আবার কাজ করছে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখলাম তারা সরকারের কাছে দাবি দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছে। আমাদের সাধারণ ছাত্রদেরকে কেউ ব্যবহার করছে, আমরা সেই জিনিসটা পরিষ্কারভাবে দেখছি। আমরা ছাত্রদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তাদেরকে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। তাদের বিষয়ে সব চিন্তায় আমাদের পজিটিভ। সবচেয়ে বড় কথা তদন্ত কমিটি কাজ করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা দেখেছি যে তারা তদন্ত কমিটিকেও প্রত্যাখ্যান করছে। এটাও একটা ভয়াবহ, জ্বালাময়ী ব্যাপার। তারা বিচারও যাচ্ছে, আবার কেউ কেউ তাদের কাজও করতে দিচ্ছে না। সাধারণ শিক্ষকরা পর্যালোচনা করছে যে এটার মধ্যে অন্য কোনো বিষয় আছে। কিছু কিছু ছাত্র এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছি।
ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে, তারা কাজ করুক। তাদেরকে সেই সময়টা দেওয়া হোক, আমরাও দেখি। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমরা জানি না তারা কোথায় কিভাবে কাজ করছে।