শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২২, ০৯:৩৬

পদ্মা সেতু ঘিরে উদ্দীপনা, ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে নামছে তিনশ বাস

পদ্মা সেতু ঘিরে উদ্দীপনা, ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে নামছে তিনশ বাস
অনলাইন ডেস্ক

যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সেতুকে ঘিরে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মধ্যে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। তা থেকে বাদ পড়েনি রাজধানীর কাছের জেলা শরীয়তপুরের মানুষও। ঢাকার খুব কাছে হলেও প্রায় দুই দশক ধরে ঢাকার সঙ্গে জেলাটির নেই সরাসরি বাস যোগাযোগ।

পদ্মা সেতু চালু হলে এবার সে দুঃখ দূর হতে যাচ্ছে। এখানকার পরিবহণ ব্যবসায়ীরা উন্নতমানের তিন শতাধিক নতুন এসি-ননএসি বাস চালু করতে যাচ্ছেন।

এজন্য প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন তারা। পদ্মা সেতু চালুর দিনই এসব বাসের একটি অংশ শরীয়তপুর-ঢাকা বা শরীয়তপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলতে শুরু করবে।

শরীয়তপুর সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপ ও পরিবহণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৮ বছর ধরে ঢাকা-শরীয়তপুর সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ। এ জেলার বাসিন্দারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌপথ দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছেন। সরাসরি বাস চালুর জন্য শরীয়তপুর সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপ, গ্লোরি পরিবহণ লিমিটেড, শরীয়তপুর ট্রান্সপোর্ট ও পদ্মা ট্রাভেলসসহ কয়েকটি পরিবহণ কোম্পানি উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন এসি-ননএসি বাস তৈরি করছে তারা। ভলভো, আইসার, অশোক লেল্যান্ড, টাটা গাড়ির (বাস) চেসিস কেনা হয়েছে। শরীয়তপুর ছাড়াও ঢাকার সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ওয়ার্কশপে চলছে বডি তৈরি।

সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে যাদের রুট পারমিট আছে, তারাই নতুন বাস নামাচ্ছেন। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানি, পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহণ ও গ্লোরি পরিবহণ রুট পারমিট নিয়ে নতুন বাস তৈরি করছে। অন্য কেউ ব্যবসা করতে চাইলে বিআরটিএর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে তাদের রুট পারমিট নিতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছে সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপ। তারা ৫০টি নতুন এসি এবং নন-এসি বাস তৈরি করছেন। এ ছাড়া পদ্মা ট্রাভেলস ৪০, শরীয়তপুর ট্রান্সপোর্ট ৩০ ও গ্লোরি পরিবহণ ২০টি গাড়ি তৈরি করছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানিও ঢাকার সঙ্গে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। একেকটি বাস তৈরিতে খরচ পড়ছে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, পদ্মা ট্রাভেলস ও শরীয়তপুর পরিবহণের কয়েকটি বাস এরই মধ্যে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত চলাচল করছে। এ দুই কোম্পানি জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মিরপুর, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও নারায়ণগঞ্জে এবং গাজীপুরে বাস চালাতে চায়।

পদ্মা ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান ও নড়িয়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনেই আমরা বাস সার্ভিস চালু করতে চাই। পরীক্ষামূলকভাবে আমরা আমাদের ১২টি বাস ঢাকা থেকে-মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত চালাচ্ছি। পাশাপাশি এ সেতু চালু হলে বিকাশ ঘটবে শরীয়তপুর জেলার শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি ও কৃষি ব্যবস্থাপনায়। সরকার পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আইসারের বিক্রয় কর্মকর্তা নকুল চন্দ্র হালদার বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে ঢাকায় নতুন বাস চালাতে পরিবহণ মালিকরা আমাদের কাছ থেকে ইঞ্জিনসহ চেসিস কিনছেন। কেউ নগদে, আবার কেউ কিস্তিতে নিচ্ছেন। এসির পাশাপাশি ভালো সাজসজ্জার নন-এসি বডি বানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

শরীয়তপুর জেলা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মাহবুব কামাল বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস চালু হবে। তখন আর আমরা অনুমোদন দেব না। আমাদের প্রধান কার্যালয় ঢাকা থেকে অনুমোদন দেওয়া হবে। এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। আমরা চাই সবাই নিয়ম মেনে ব্যবসা করুক।

শরীয়তপুর জেলা শহরের ব্যবসায়ী রাজু মিয়া, রনি বেপারী বলেন, সপ্তাহে চারবার ঢাকায় যাই। আমি জীবনে কখনো শরীয়তপুর থেকে সরাসরি বাসে ঢাকা যাইনি। অনেক দুর্ভোগ ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করি। পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। এখন জেলা শহর থেকে দুই ঘণ্টায় ঢাকায় যেতে পারব। এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়।

সূত্র: যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়