রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:১৩

‘বাসযোগ্যতা বাড়াতে একযোগে কাজ করার আহ্বান’

‘বাসযোগ্যতা বাড়াতে একযোগে কাজ করার আহ্বান’
অনলাইন ডেস্ক

সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নগর এলাকাগুলোতে বাসযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব। সে লক্ষ্যে পরিকল্পনাবিদ, বিভিন্ন পেশাজীবী, সমাজচিন্তকসহ নীতি নির্ধারকদের একযোগে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘দক্ষিণ এশিয়ার মেগাসিটির পরিবর্তনশীল নির্মিত পরিবেশ’ শীর্ষক সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো ও অন্যান্য প্রকল্পের কারণে নগর এলাকায় খোলা জায়গা কমে যাচ্ছে, কমিউনিটি স্পেস হারিয়ে যাচ্ছে, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের লোকদের নাগরিক সুবিধাদি ও পরিষেবা প্রাপ্তি আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মেগাসিটিগুলোর বাসযোগ্যতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর নগর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন, গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন।

বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মেগাসিটিগুলোর নগর পরিকল্পনাগত চ্যালেঞ্জগুলো প্রধানত দ্রুত নগরায়ণ, জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ, অপরিকল্পিত অবকাঠামো, পরিবেশ দূষণ, এবং নাগরিক সুবিধাদি ও পরিষেবার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এগুলোর উত্তরণে স্থানীয় এলাকার বৈশিষ্ট্যসমূহ মাথায় রেখে পরিকল্পনা কৌশল সাজাতে হবে।

নলেজিস্ট উইদাউট বর্ডারসের সমন্বায়ক ড. তাসলিম শাকুর বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন মেগাসিটিতে নগরের দরিদ্র ও প্রান্তিক লোকদের জন্য সাশ্রয়ী ও মানসম্মত আবাসনের উদ্যোগ ছিল খুবই সীমিত। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় ঢাকা, কলকাতা, দিল্লী, করাচি, লাহোরের মত শহরে একের পর এক মানহীন বস্তি গড়ে উঠেছে।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, কার্যকর পরিকল্পনা, সমন্বিত নীতি, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের নগরগুলোর বাসযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে পেশাজীবীদের নগর বাস্তবতাকে মাথায় রেখে কার্যকর কৌশল উদ্ভাবনে জোর দিতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস বিষয়ক গবেষক অনিন্দিতা ঘোষাল বলেন, দেশভাগের পর কলকাতা কিংবা ঢাকায় যারা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এসেছেন, তারা নতুন পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তারপরও তাদের বসত এলাকায় ফেলে আসা দেশের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেই দেশের ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলোর রূপায়ণ করার চেষ্টা করেছেন স্থানান্তরিত শহরে।

অনলাইনে দিল্লী থেকে স্থপতি নিত্য বালী বলেন, দিল্লী শহরে নগরায়ণের চাপে নদীর তীর, বন্যা প্রবাহ এলাকাগুলো যথাযথভাবে রক্ষা করা যাচ্ছে না। হকারের চাপে নগর এলাকার অনেক খোলা পরিসর আর আগের মতো ব্যবহার করার সুযোগ কমে যাচ্ছে।

অনলাইনে পাকিস্তানের লাহোর থেকে লাহোর কলেজ ফর উইমেন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক আসিয়া জাবীন বলেন, সড়ক অবকাঠামো প্রকল্পের কারণে লাহোর শহরের গণপরিসর ও খোলা জায়গাগুলো ক্রমান্বয়ে তাদের আবেদন হারিয়ে ফেলছে। শহরের সবুজ এলাকা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে নগরে কমিউনিটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এ কর্মশালার আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন ড. তাসলিম শাকুর, অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, এবং স্থপতি ইমামুর হোসাইন। এতে দক্ষিণ এশিয়ার মেগাসিটির পরিবর্তনশীল নির্মিত পরিবেশ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, পরিবেশবিদ, গবেষক এবং নীতিনির্ধারকরা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়