বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২১

যেভাবে মুসলিমবিরোধী হয়ে উঠল ভারতের ঘুমন্ত এক রাজ্য

যেভাবে মুসলিমবিরোধী হয়ে উঠল ভারতের ঘুমন্ত এক রাজ্য
অনলাইন ডেস্ক

গত ৬ অক্টোবর ভাই আলফেসানি আহমেদের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় শাহিন আহমেদের (৩৮)। ওই দিন মোবাইল ফোনে দেওয়া কলে তীব্র গোলাগুলির মাঝে বাঁচার জন্য আলফেসানির আর্তচিৎকারের আওয়াজ শুনতে পান শাহিন।

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার নর্থ ত্রিপুরা জেলা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম ঝারঝেরি। এই গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে কদমতলা বাজারের অবস্থান। সেখানে একটি স্মার্টফোন ও ইলেক্ট্রনিক পণ্য-সামগ্রীর দোকান ছিল আলফেসানির। ৬ অক্টোবর স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে একদল উগ্রপন্থী হিন্দু বাজারের মুসলিমদের দোকানে হামলা চালায়। আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয় বেশ কিছু দোকান। বাড়ি ফেরার জন্য তড়িঘড়ি করে দোকান বন্ধ করে ফিরছিলেন আলফেসানি।

শাহিন আহমেদ বলেন, ‘‘ওই সময় বাজারে দাঙ্গা শুরু করেছিল একদল জনতা। আলফেসানি আহমেদ জানতেন, তার দোকান রেহাই পাবে না। যে কারণে তিনি দোকান বন্ধ করে চলে যান। তবে যাওয়ার সময় দোকান থেকে কেবল আর্থিক লেনদেন এবং রেকর্ড সংক্রান্ত দোকানের হিসাবের খাতা সঙ্গে নেন। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই গুলিতে মারা যান তিনি।’’

স্থানীয় হিন্দু ও মুসলমানদের মাঝে সেদিন সকালের দিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একজন মুসলিম গাড়ি চালক হিন্দুদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার জন্য হিন্দু ক্লাবকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এর সূত্রপাত হয়। পরে মুসলিম চালক ও তার গাড়ির মুসলিম এক যাত্রীকে ক্লাবের সদস্যরা লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নর্থ ত্রিপুরা জেলার কদমতলা মহকুমায় হিন্দু ও মুসলিমদের মিশ্র জনসংখ্যা রয়েছে। সেখানে মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশেরও বেশি হিন্দু এবং মুসলমানরা প্রায় ৩৫ শতাংশ। রাজ্যের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী মুসলিমদের এই হার ত্রিপুরার মোট ৩৬ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ।

হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ নর্থ ত্রিপুরার কদমতলা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মুসলমানরা ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু ও মুসলমানদের মাঝে সম্প্রীতির স্মারক হিসেবে দুর্গাপূজা উদযাপনে চাঁদা দিয়ে থাকেন। এর আগে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা দুর্গাপূজার চাঁদা জোরপূর্বক আদায়ের বিষয়ে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

কিন্তু গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে সেখানকার পরিস্থিতি বদলে যায়। হিন্দু ও মুসলিমরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। যে কারণে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জনতার ওপর লাঠিচার্জ এবং গুলি চালায় পুলিশ। সাম্প্রদায়িক এই সংঘাতে অন্তত ১৭ জন আহত হন; যাদের বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য। আর মারা যান একজন। তিনি ছিলেন আলফেসানি।

তার ভাই শাহিন আহমেদ আলজাজিরাকে বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ই আলফেসানি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।’’ ওই সময় নর্থ ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন ভানুপদ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সেদিন পুলিশ বিশেষ কাউকে লক্ষ্যবস্তু করেনি এবং আলফেসানির মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত চলছে।

তবে পুলিশের বক্তব্য নিয়ে আলফেসানির পরিবারের দ্বিমত রয়েছে। আলফেসানির মা আলিফজান বেগম বলেন, ‘‘পুলিশই তার ছেলের মাথায় গুলি করেছে। আমার হৃদয়ের আগুন কখনই নেভানো যাবে না। এটা একটা খুন।’’

• দাঙ্গার শুরু যেভাবে

এর আগে, মুসলিমদের একটি প্রতিনিধিদল মুসলিম চালক ও যাত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় দায়ীদের গ্রেপ্তার করতে স্থানীয় পুলিশকে আহ্বান জানিয়েছিল। পরে কদমতলা পুলিশ মুসলিম চালক ও নারী যাত্রীর ওপর হামলার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় মুসলমানদের প্রতিবাদের পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মুসলিম প্রতিনিধি দলের এক সদস্য নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে আলজাজিরাকে বলেন, দুর্গাপূজা আয়োজক ক্লাবের আরেক সদস্য ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে উসকানিমূলক মন্তব্য করায় উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। আলজাজিরা এই মন্তব্য স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করে দেখেছে।

পরে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় ওই যুবককে খুঁজতে যান একদল মুসলিম। কদমতলা মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি বিভু দেবনাথ আলজাজিরাকে বলেন, ‘‘তারা পাথর ছুঁড়ে দরজা ও জানালা ভেঙে ফেলে। এতে হিন্দুদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়। হিন্দু ওই যুবককে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানায় মুসলিমরা।’’

মুসলিমদের এমন দাবির মুখে হিন্দুরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আদর্শিক গুরু কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি গোষ্ঠীর সদস্যরা কদমতলা বাজারে মুসলিমদের কিছু দোকানে ভাঙচুর চালান। বিজেপি ত্রিপুরার ক্ষমতায় রয়েছে।

হিন্দু-মুসলিম দুই গ্রুপের দাঙ্গা তীব্র আকার ধারণ করায় বাজার থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আলফেসানি। কিন্তু তিনি পালিয়ে যেতে পারেননি।

• বেছে বেছে জ্বালাও-পোড়াও

৮ অক্টোবর সকালের দিকে সুহাইল আহমেদ খান (৪০) কদমতলা বাজারে তার দোকানে যান। বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের পথ হলেও সহিংসতার কারণে সেখানে নিরাপদে যেতে তার সময় লেগেছিল দু’দিন।

একদিন আগে অর্থাৎ ৭ অক্টোবর স্থানীয় হিন্দুরা ও কদমতলার বাইরে থেকে আসা উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং আরএসএসের মিত্র বজরং দলের সদস্যরা বাজারের উপকণ্ঠে জড়ো হন। পরে তারা বাজারের দিকে যান। এ সময় তারা বাড়িঘরে আগুন দেন এবং লুটপাট করেন বলে জানান বিরোধী কংগ্রেস পার্টির স্থানীয় নেতা হীরা লাল নাথ। যদিও ত্রিপুরায় আরএসএসের প্রচারক তাপস রায় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

উন্মত্ত হিন্দু জনতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সুহাইল আহমেদ খানের দোকান। কদমতলা বাজারে তার স্মার্টফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য-সামগ্রী মজুত করার দোকানটিও লুট হয়েছে। সারা জীবনের সঞ্চয় বিনিয়োগ করেছিলেন দোকানটিতে। সুহাইল খান বলেন, ‘‘৫৭ লাখ রুপিরও বেশি আগুনে পুড়ে গেছে। এই ক্ষতি আমাকে মৃত করেছে।’’

কথা বলতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছিল সুহাইল খানের। তিনি বলেন, ‘‘এটা সম্মিলিত সাজা। তারা আমাদের মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করেছে।’’ কদমতলা বাজারের ঠিক কেন্দ্রে কদমতলা জামে মসজিদের অবস্থান। একই দিনে (৭ অক্টোবর) মসজিদটিতেও আগুন দেয় উন্মত্ত হিন্দুরা। কদমতলা জামে মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা আব্দুল মতিন আলজাজিরাকে বলেন, ‘‘তারা ধর্মীয় সমস্ত বই পুড়িয়ে দিয়েছে।’’

বাজারের উপকণ্ঠে সরসপুর পাড়ার বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সী ইসলাম উদ্দিন তার পুড়ে যাওয়া বাড়িটি পুনরায় নির্মাণ করছেন। তার বাড়িটি সেখানকার ১০টি মুসলিম মালিকানাধীন বাড়ির একটি। আশপাশে বিশাল হিন্দু জনসংখ্যার বসবাস রয়েছে। মুসলিমদের সব বাড়িঘর একই দিনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘‘জীবন বাঁচাতে পরিবারসহ আমাকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।’’ তার প্রতিবেশী আতরুন নেসা। তার বাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন স্থানীয় এনজিওর সহায়তায় কোনোরকমে বেঁচে আছেন। তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল একটি ই-রিকশা; যা স্বামী সিরাজ উদ্দিন চালাতেন। হিন্দু জনতা রিকশাটিও পুড়িয়ে দিয়েছে।

৪৭ বছর বয়সী আতরুন নেসা সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের খাবার জোগার করার একমাত্র অবলম্বন ছিল রিকশাটি। আমরা এখন কীভাবে জীবন চালাই?’’

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন, ৭ অক্টোবর উত্তেজিত হিন্দু জনতার তাণ্ডবের সময় পুলিশ ‘‘দর্শক’’ হিসাবে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশ মুসলিমদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের অনুমতি দিয়েছে বলে দাবি করেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) স্থানীয় বিধায়ক ইসলাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ চাইলে হিন্দু জনতাকে থামাতে পারতো। তখন আমাদের মনে হয়েছে পুলিশ একটি পক্ষ বেছে নিয়েছে।’’

বিরোধী দল কংগ্রেসের বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, বিজেপির ‘‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়’’ কদমতলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিজেপি মুসলমানদের উসকানি দিতে চেয়েছিল।

মন্তব্য জানতে নর্থ ত্রিপুরার তৎকালীন পুলিশ সুপার চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আলজাজিরাকে বলেন, আমি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সঠিক ব্যক্তি নই। পরে ত্রিপুুরা পুলিশের প্রধান অমিতাভ রঞ্জনকে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। এছাড়া তার অফিসে বিস্তারিত প্রশ্ন পাঠানো হলেও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। এর আগে অবশ্য সহিংসতার সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।

• ভয়ের মাঝে মুসলিমদের বসবাস

গত কয়েক মাসে ত্রিপুরায় আন্তঃধর্মীয় সহিংসতার সর্বশেষ ঘটনা কদমতলার সংঘাত। এর আগে, মুসলিমরা হিন্দু দেবদেবীর অপমান করেছেন বলে হিন্দুরা অভিযোগ তোলার পর গত আগস্ট ও অক্টোবর মাসে উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় প্রতিশোধ হিসেবে মসজিদে হামলা এবং কিছু কিছু জায়গায় মুসলমানদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ত্রিপুরা-ভিত্তিক সমাজকর্মী ও মুসলিমদের ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন অব ইন্ডিয়ার জাতীয় সম্পাদক সুলতান আহমেদ সর্বশেষ এই হামলার ঘটনায় ২০২১ সালে রাজ্যের বিশাল অংশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিধ্বংসী দাঙ্গার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘তখন যা ঘটেছিল তা নিয়ে এখনও আতঙ্কের মাঝে বাস করেন ত্রিপুরার মুসলমানরা।’’

অতি-ডানপন্থী গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট বিপুলসংখ্যক হিন্দু জনতা সেই সময় রাজ্যের বিভিন্ন জেলাজুড়ে—বিশেষ নর্থ ত্রিপুরায়—মুসলমানদের বাড়িঘর এবং মসজিদে হামলা চালায়। এই জেলার সঙ্গে বাংলাদেশের ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ওই সময় বাংলাদেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের সময় হিন্দু মন্দিরে পবিত্র কুরআন পাওয়া ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেওয়ার পর ত্রিপুরায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। আহমেদ বলেন, ‘‘তারপর থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যেকোনও ঘটনা উত্তর ত্রিপুরায় বসবাসকারী মুসলমানদের বিপদে ফেলে দেয়।’’

• বদলে গেছেন হিন্দুরা

দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপুরার উপজাতি সম্প্রদায় ও বাঙালিদের মাঝে জাতিগত সহিংসতা চলে আসছে। তবে ঘুমন্ত এই পার্বত্য রাজ্যে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে সংঘাতের দীর্ঘ কোনও ইতিহাস ছিল না। অন্তত ২০১৮ সালে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তঃধর্মীয় সহিংসতার পরিসংখ্যান প্রকাশ বন্ধ করলেও দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে দাঙ্গার পরিসংখ্যানে ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মাত্র দু’টি ঘটনা রয়েছে। আর এই দু’টি দাঙ্গার ঘটনাও ঘটেছিল ২০১৯ সালে।

ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) স্থানীয় বিধায়ক ইসলাম উদ্দিন বলেন, হিন্দু গোষ্ঠীগুলো ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ডজনখানেক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করার পর এই সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর মধ্যে ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর রাজ্যের মুসলমান মালিকানাধীন রাবার বাগানগুলোতে হামলার ঘটনাও রয়েছে। এছাড়া রাজ্যের প্রাচীন একটি মসজিদের স্থানে মন্দির রয়েছে বলেও দাবি করছেন হিন্দুরা। পাশাপাশি হিন্দুদের হাতে মুসলিম পুরুষদের পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাও বেড়েছে।

বিজেপির ত্রিপুরার মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী আলজাজিরাকে বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের অধীনে এই জাতীয় কোনও গোষ্ঠী বিশেষ সুবিধা পায় না। এই সরকার সক্রিয় সরকার এবং উন্নয়নমুখী সরকার।’’

এদিকে, কদমতলায় এখনও উত্তেজনা চলমান রয়েছে। সুহাইল আহমেদ খান বলেন, ‘‘বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক মুসলিম। তারা এখন হিন্দু দোকান থেকে কিছু কিনতে চান না। এখানে যে সম্প্রীতি ছিল তা ফিরে আসতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে অথবা কখনই ফিরবে না।’’

কদমতলায় বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার সাবেক সদস্য আব্দুল হক মনে করেন, সাম্প্রতিক সহিংসতার এই ঘটনা সেখানকার বৃহৎ পরিবর্তনের প্রতীক। তিনি বলেন, আগে হিন্দুদের উৎসবের সময় তারা লাউডস্পিকার এমনভাবে বাজাতেন যাতে মুসলমানরা বিরক্ত না হন। কিন্তু এখন তারা লাউডস্পিকারে উসকানিমূলক গান বাজান।

আব্দুল হক বলেন, ‘‘ত্রিপুরার হিন্দুরা বদলে গেছেন।’’

সূত্র: আলজাজিরা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়