প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:০৮
৬৫৩ পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিন পৌঁছালো এমভি বার আউলিয়া
ছয় ঘণ্টা সাগর পাড়ি দিয়ে ৬৫৩ জন পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনে পৌঁছেছে এমভি বার আউলিয়া। রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় দ্বীপের জেটিতে পৌঁছে জাহাজটি।
জাহাজের কক্সবাজারের ইনচার্জ হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, সকাল ১০টায় কক্সবাজার পৌরসভার নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে জাহাজটি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও বার আউলিয়ার ইনচার্জ বাহাদুর বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে দীর্ঘ আট মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু করতে পেরে আমরা আনন্দিত। প্রথমদিনে ৬৫৩ পর্যটক নিয়ে বার আউলিয়া জাহাজটি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দিয়ে বিকেল ৪টায় দ্বীপে পৌঁছায়। ভ্রমণ পিয়াসীদের স্বস্তির পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মুখে হাসি ফুটেছে।
সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নীলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে কক্সবাজার থেকে মৌসুমের প্রথম জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছাড়ে। আমরা সবকিছু পরিদর্শন করেছি। প্রায় ছয়ঘণ্টা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিকেলে জাহাজটি দ্বীপে পৌঁছে।
সম্প্রতি নাফ নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠায় নাব্যতার সংকট এবং মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির কারণে নিরাপত্তার অভাবে আপাতত টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। শুধু কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রতি বছর সরকারের পক্ষ থেকে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাস টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। বাকি ছয় মাস সাগর উত্তাল থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে।
কিন্তু গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরিনা রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে সেন্টমার্টিনের পর্যটন নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠন হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে ওঠার আগে এন্ট্রি পয়েন্টে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তৈরি করা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ট্রাভেল পাস দেখাতে হবে। ট্রাভেল পাসধারীরা অনুমোদিত জাহাজে উঠতে পারবে। পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজে পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছার পর কোনো হোটেলে থাকবেন সেটি লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করা হবে।
ট্যুরিজম বোর্ডের তৈরি অ্যাপটি সম্প্রতি অনুমোদিত পর্যটকবাহী জাহাজগুলোর পরিচালকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। যারা সেন্টমার্টিন যেতে টিকেট কাটছেন তাদের অ্যাপস থেকে ফ্রি-তে ট্রাভেল পাস দেওয়া হচ্ছে। আর ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের জাহাজে ভ্রমণ নিশ্চিত করা হয়। দ্বীপে যাওয়া পর্যটকদের সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিতে জাহাজ কর্তৃপক্ষ ছাড়া যাত্রীদের ট্রাভেল পাস নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন বার আউলিয়া জাহাজের কক্সবাজারের ইনচার্জ হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।
সেন্টমার্টিনের হোটেল ব্যবসায়ী দিদারুল আলম বলেন, ডিসেম্বরের শুরুতে সেন্টমার্টিনে পর্যটক আসবেন- সেই লক্ষ্য নিয়ে পর্যটক বরণে দ্বীপের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট সাজানো হয়। পর্যটকহীন মৌসুমের দুই মাস সবার ক্ষতি হয়েছে।
ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা দাবি করেছিলাম দিনে গিয়ে দিনে চলে আসতে হলে কেয়ারি সিন্দাবাদ ও এই ক্যাটাগরির জাহাজগুলো টেকনাফ থেকে চলাচলের। টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। আর কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে সময় লাগছে ৫-৬ ঘণ্টা। সে ক্ষেত্রে দিনে আসতে যাওয়া পর্যটকদের বিকেলেই জাহাজ ধরতে হবে। এতে তাদের ঘাটে যাওয়া ছাড়া কিছুই দেখা হয়ে উঠবে না।
এর আগে অনুমতি পেয়ে বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ চলাচল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও যাত্রী সংকটের কারণে সেন্টমার্টিন যাতায়াত সাময়িক বন্ধ রাখে জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ। পহেলা ডিসেম্বর পুনরায় সেন্টমার্টিন যাবার কথা থাকলেও স্বল্প যাত্রীর কারণে আবারও যাত্রা বাতিল করে কেয়ারি সিন্দাবাদ। এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজারের ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী।