প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৬
গণভবনে তিন উপদেষ্টা, জানালেন স্মৃতি জাদুঘরের পরিকল্পনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে গণভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এ সময় শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও ছিলেন। তারাও গণভবন ঘিরে পরিকল্পনার কথা জানান।
পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জাদুঘর হিসেবে গণভবনকে জনসাধারণের জন্য খোলা হবে। জনগণের স্মৃতি ধারণ করতেই গণভবনকে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে।’
‘স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রনায়ক এলে কী পরিণত হয় এবং জনগণই যে আসল মালিকানা এবং ক্ষমতার মালিক সেই বিষয়টিকে একটি নিদর্শন হিসেবে পুরা পৃথিবীর বুকে রাখার জন্যই আমরা এই গণভবনটিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।-বলেন নাহিদ ইসলাম।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা আরও বলেন, এটি আজকে আমাদের প্রাথমিক ভিজিট ছিল। এখানে যারা দায়িত্বরত আছেন গণপূর্ত এবং স্থাপত্য বিভাগে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের থেকে আমরা প্রাথমিক পরামর্শ নিয়েছি এবং আমাদের আকাঙক্ষাগুলো বলেছি, আমরা কীভাবে দেখতে চাই সেটি বলা হয়েছে। এছাড়া ফরমাল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামীকালকের মধ্যেই হয়তো কমিটি গঠন হয়ে যাবে।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, জুলাই আন্দোলন ছাড়াও গত ১৬ বছরে যাদের ওপর নিপীড়ন, গুম, খুনের ঘটনা ঘটেছে, সেই তালিকা থাকবে এই জাদুঘরে। মানুষের ক্ষোভের উপস্থাপনও থাকবে সেখানে। কিছু ডিজিটাল রিপ্রেজেন্টেশনও থাকবে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ফ্যাসিবাদের নিদর্শন সংরক্ষণ করে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের পর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। স্থপতি ও শিল্পী নিয়ে জাদুঘর নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।
সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-সহিংসতাসহ নানা ঘটনা প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে উদ্যোগ নিচ্ছি। এটা যে গ্রহণযোগ্য নয় তা আমরা শুরু থেকেই বলছি।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
সেদিন ছাত্র-জনতা গণভবন দখলের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এই ঘটনাকে স্মৃতি হিসেবে জাতির সামনে তুলে ধরতে গণভবনকে জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকের পর সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, ‘গণভবনে ফ্যাসিবাদী সময়ের অত্যাচারের যে স্মৃতি এবং আমাদের শহীদদের স্মৃতি কীভাবে সংরক্ষিত করে একটি সুন্দর জাদুঘর করা যায়, এ বিষয়ে খুব দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ কাজটি সম্পন্ন করবে।’