রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে

প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৪, ২১:৩৮

‘আমরা পকেটে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে’

‘আমরা পকেটে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে’
অনলাইন ডেস্ক

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দুষ্কৃতকারীদের চালানো নৈরাজ্য, ধ্বংসযজ্ঞ রুখতে না পারার পেছনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্বলতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

তিনি বলেন, আমার কাছে কষ্ট লাগে রংপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে যখন দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুর করল, আগুন দিল, তখন তো আপনাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আপনারা কীভাবে ভুলে গেলেন আমরা বীরের জাতি, দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের হাতে অস্ত্র ছিল না শুধু জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে স্বাধীন করেছি। আমরা পকেটে হাত দিয়ে যদি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে। এটারই প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ভাঙচুরের আন্দোলন শুরু করে দিল। রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করার আন্দোলন শুরু করে দিল। সেতু ভবন পুড়িয়ে দিল। সেতু ভবনের সাথে কোটা আন্দোলনের কী সম্পর্ক, এটা আমার জিজ্ঞাসা। ত্রাণ অধিদপ্তরও পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সংস্কৃতির ধারক-বাহক বিটিভি। স্বাধীনতা আন্দোলনসহ আমাদের গৌরবোজ্জ্বল সব কিছু বিটিভির তথ্য ভাণ্ডারে, আর্কাইভে ছিল। পরিকল্পিতভাবে বিটিভি ভবনে আগুন দিয়ে আর্কাইভগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে আলবদর-রাজাকারদের দুষ্কর্মের ইতিহাস ছিল। যা মাঝে মাঝে প্রদর্শিত হতো, তারা সেটাই টার্গেট করেছে।

তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনের পেছনে নিশ্চয়ই একটা কারণ ও শক্তি আছে। তারা আমাদের গর্বের মেট্রোরেলেও আগুন দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসের টোল ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হলো। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ হলো। ভিসিকে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হলো। কেন তাকে জানে মেরে ফেলবেন, তার দোষটা কী? নরসিংদীতে জেলা কারাগার হাজার হাজার জনতা এসে ভেঙে ফেললো। সেখান থেকে ৯ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। রংপুরে তাজহাট থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ডিবির কার্যালয়ে আক্রমণ করা হলো। ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানা, উত্তরা থানা, মোহাম্মদপুর থানায় আক্রমণ করেছে। এভাবে একের পর এক থানায় হামলা হয়েছে।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে। সেজন্যই আমরা সান্ধ্য আইন দিয়েছি। আপনারা দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে আমাদের হাতে ধরিয়ে দিন। আমরা যদি তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারি, তাহলেই এ দেশ শান্ত হবে এবং আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারব।

সারা দেশে নজিরবিহীন তাণ্ডবের ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ছেলেদের ভবনের ছাদ থেকে পিটিয়ে পিটিয়ে ফেলে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সেই দৃশ্যগুলো আপনারা দেখেছেন। তারা এখন জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই রকম একটা মুমূর্ষু সময়ে আপনাদেরকে (দলের নেতাকর্মী) ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমরা এখন দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করছি। যে যেখানে থাকবে আমরা তাকে ধরব। সরকারি সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। আমরা কাউকে ছাড় দিব না। যে পর্যন্ত আমরা সবাইকে শনাক্ত না করব পর্যন্ত আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।

রংপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা তো ফেল। অথচ ঢাকায় আমার ছাত্রলীগের অন্তত ৮-১০ জন শাহাদত বরণ করেছে। আওয়ামী লীগের শাহাদত বরণ করেছে। দুষ্কৃতকারীরা ছাত্র আন্দোলন থেকে গণভবন আক্রমণ করেছিল। বঙ্গভবনের চতুর্দিকে ঘেরাও করেছিল। সচিবালয়ে আক্রমণ করেছিল। সেখানে কত ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেগুলো জানা উচিত।

তিনি আরও বলেন, এটা কোনো দিন ছাত্র আন্দোলন হতে পারে না। ছাত্ররা যারা লেখাপড়া শিখতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে, তারা এই আন্দোলন করতে পারে না। আজকে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা সবাই একটি বিশেষ মহল দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও তার স্ত্রীকে যদি উদ্ধার না করত তাহলে হয়তো তাকে পুড়িয়ে মারত। কাজেই এটা কোনো ছাত্র আন্দোলন নয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতি তার বেঞ্চে শতকরা ৭ ভাগ রেখে বাকি সব কোটা বাতিল করে দিয়েছেন। যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়েছে সেটার সুবিধাও মেধাবীরা পাবে। কারণ আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের সন্তানদের বেশির ভাগের বয়স অনেক আগেই ৩০ বছর পার হয়েছে। কাজেই আমাদের জন্য আর কোটা নেই। এখন জিরো, সেই ক্ষেত্রেও আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) কিছু বলিনি। এখন ৯৮ শতাংশ মেধায় আসবে। এরপরও ছাত্রনেতারা বলছে না তারা আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে চায়। তারা যে আরও দাবি করেছিল সেগুলোর বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি বলেন, আমি সব সময় বলে আসছি ছাত্রনেতারা ভুল করছে। এখনো বলছি তারা ভুলের মধ্যে আছে। এই যে ক্ষতিগুলো হলো, সম্পদ নষ্ট হলো, মানুষের জান গেল, এর দায়িত্ব কে নেবে? নিজের কাছে প্রশ্ন করুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, যারা যারা এই সম্পদ বিনষ্ট করেছে, থানা লুট করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করেছে, ভিসিকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের সবাইকে আমরা চিহ্নিত করব। যে অর্থ যোগান করেছেন, সহযোগিতা করেছেন তাকে আমরা চিহ্নিত করব। তাদের বিচারের ব্যবস্থা করব।

মতবিনিময় সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক স্বপন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেনসহ সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য টিপু মুনশি, নাছিমা জামান ববি, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু, জাকির হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান প্রমুখ।

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দুষ্কৃতকারীদের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা পরিদর্শনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর সফরে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত তাজহাট থানা, মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পরিবার পরিকল্পনার বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়