প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০২:৪৮
১৫ শতাংশ কর দিলে কালো টাকা সাদা হবে
আসন্ন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে থাকবে না কোনো প্রশ্ন। থাকছে আকর্ষণীয় কর পরিশোধ সুবিধা। আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন— ফ্ল্যাট ও জমির জন্য নির্দিষ্ট করহার এবং নগদসহ অন্যান্য সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলেই সাদা হবে কালো টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ কর পরিশোধ সাপেক্ষ কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। চার বছর পর প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেটের মূল স্লোগান সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার।
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে— দেশের প্রচলিত আইনে যাই হোক না কেন কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহারে এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। বিগত দিনের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বাধিক ২০ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা সরাসরি বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করেছিলেন। ওই অর্থবছরেও ৯৮ শতাংশ করদাতা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঘোষণার মাধ্যমে সাদা বা বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন।
৪ বছর বিরতির পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফেরত আসতে পারে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার করার সুযোগ। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে সাড়া না পাওয়ায় এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। কারণ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে এসব অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রাখা হয়েছিল। কালো টাকা সাদা করার সময় বা এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে কেউ যেন অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলতে পারে, এজন্য ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে এনবিআর।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রথমে তাদের লুটপাট করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, এরপরে সেটা বৈধ করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা তো অনৈতিক একটা বিষয়। সরকারের উচিত ছিল টাকা ফেরত আনার। কিন্তু সরকার তো সফল হচ্ছে না। এমনিতেই কালো টাকা ভোগ করে তারা অন্যায় করছে। তারপরও তাদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। তারপরও সরকার সফল হবে বলে মনে হয় না।
এনবিআরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নানাভাবেই কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়। সেখান থেকে তৎকালীন সময়ে সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়। ১৯৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়। এতে সরকার কর পায় ৮১ লাখ টাকা। ১৯৮১-৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা সাদা হয়, যাতে আয়কর পায় ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
১৯৯১-৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং আয়কর আদায় হয় ১৫ কোটি টাকা। এরপর ধারাবাহিকভাবে কালো টাকা সাদা হওয়ার পরিমাণ কিছুটা বাড়তে থাকে। ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত তিন বছরে ৯৫০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং আয়কর আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। পরের ৭ বছর অর্থাৎ ২০০১-০৭ পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা, ২০০৭-০৯ পর্যন্ত এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০০৯-১৩ পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা এবং ২০১৩-২০ পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ কোটি কালো টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় যথাক্রমে ১০২ কোটি, ৯১১ কোটি, ২৩০ কোটি ও ১ হাজার ৭৩ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বিশাল অংকের এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।