প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ০৮:০০
মৌলিক আইনের বাংলা পাঠ প্রণয়নে কমিটি করলেন হাইকোর্ট
বিচারব্যবস্থায় বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে দণ্ডবিধি, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধিসহ মৌলিক আইনের বাংলা পাঠ প্রণয়নে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন হাইকোর্ট। নবগঠিত এ কমিটি আইনের নির্ভরযোগ্য (অথেনটিক টেক্সট) বাংলা অনুবাদের পাশাপাশি তা পাঠ উপযোগী করে প্রকাশের উদ্যোগ নেবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং বিভাগ, আইন কমিশন, বাংলা একাডেমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ও বাংলা বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। মৌখিক আদেশে প্রতিনিধিদের নাম ও পদবি উল্লেখ করেননি আদালত।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘আমরা সবাই বলছি আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার চাই।
কিন্তু মৌলিক যে আইনগুলোর ওপর গোটা বিচারব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে, তার সবগুলোই ইংরেজিতে। তাহলে বিচারব্যবস্থায় বাংলার ব্যবহার কিভাবে সম্ভব? তাই পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই কমিটিকে মৌলিক আইনগুলোর বাংলা পাঠ প্রণয়ের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ এ ছাড়া আগামী ২৯ আগস্টের মধ্যে এ কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।
মৌলিক আইনগুলোর বাংলায় নির্ভরযোগ্য অনুবাদ করে তা প্রকাশের জন্য ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। নোটিশ অনুসারে সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭’-এর কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রচলিত মৌলিক আইনগুলো নির্ভরযোগ্য বাংলা অনুবাদের পাশাপাশি পাঠ উপযোগী করে তা প্রকাশের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে। আইনসচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন এবং বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। সে রুলে চূড়ান্ত শুনানির পর কমিটি গঠন করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
নোটিশে বলা হয়, দণ্ডবিধি, ১৮৬০, সাক্ষ্য আইন, ১৯৭২, চুক্তি আইন, ১৮৭২, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭, সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট, ১৮৮৭, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২, ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ দেওয়ানি কার্যবিধি, এবং ১৯০৮ তামাদি আইন, ১৯০৮, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (আপিল বিভাগ) রুলস, ১৯৮৮, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলস, ১৯৭৩, ক্রিমিনাল রুলসের অর্ডারস, ২০০৯, সিভিল রুলস রুলসের অর্ডারসসহ অধিকাংশ আইন ব্রিটিশ আমলে ইংরেজি ভাষায় প্রণীত।
আদালতে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব আইনের গুরুত্ব ও ব্যবহার সর্বাধিক।
নোটিশে আরো বলা হয়, এ আইনগুলোর বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রণয়ন ও প্রকাশ ছাড়া আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের আইনি বিধান সম্পূর্ণ অর্থহীন এবং অযৌক্তিক। এখন পর্যন্ত এসব মৌলিক আইনের কোনো নির্ভরযোগ্য অনুবাদ করা হয়নি। সর্বস্তরে বিশেষত আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের স্বার্থে এসব মৌলিক আইনের নির্ভরযোগ্য বাংলা অনুবাদ জরুরি। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে নোটিশের জবাব না পাওয়ায় ওই বছর ৬ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন এই ১০ আইনজীবী। প্রাথমিক শুনানির পর রুলসহ আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।