প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩১
বাংলার, বাঙালির স্বাধীনতার মাস
আবারো ফিরে এলো বাঙালির স্বাধীনতার মাস। স্বাধীনতাকামী জাতির চলমান লড়াইয়ের চূড়ান্ত পর্ব সূচিত হয় ১৯৭১ সালের মার্চের উত্তপ্ত দিনগুলোতে। হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সাহসী স্মৃতি নিয়ে এসেছে মার্চ মাস।
১৯৭০ সালে নির্বাচনী যুদ্ধে নিরংকুশ বিজয় অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকচক্র বিজয়ী বাঙালির হাতে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। নানা টালবাহানায় কালক্ষেপণ করতে থাকে পাকিস্তানিরা। বাঙালিকে ন্যায্য ক্ষমতা না দিয়ে হানাদার ও তাদের দোসররা গণহত্যার নীলনকশা করতে থাকে।
গণতান্ত্রিক বাঙালি জাতি অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে শুরু করে অসহযোগ। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন এবং সর্বাত্মক লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু হানাদার পাকিস্তানিরা জনতার গণদাবিকে উপেক্ষা করে বেছে নেয় অস্ত্রের ভাষা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মুক্তিকামী নিরীহ জনগণের উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে শুরু করে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা।
'অপারেশন সার্চলাইট' নামে কুখ্যাত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে বাঙালির রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নির্মূল করতে উদ্যত হয়। এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এবং ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত 'অপারেশন ব্লিটজ'-এর পরবর্তি অনুষঙ্গ। গণহত্যার এই অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং বাঙালি জাতি ও তাদের স্বাধীনতার স্পৃহাকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।
হানাদার পাকিস্তানিদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। বাংলাদেশ পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে।
পাকিস্তানি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে অকুতোভয় বাঙালি জাতি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে। সাহসে ও শপথে ঐক্যবদ্ধ হয় স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্য। শুরু হয় বাঙালির মহত্তম মুক্তিযুদ্ধ, বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের সশস্ত্র যুদ্ধ।
১৯৭১ সালের মার্চে সূচিত মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তাক্ত রণাঙ্গন পেরিয়ে অভ্যুদয় ঘটায় স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, লক্ষ শহিদের জীবনদানের বিনিময়ে, হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, দুর্বার মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়হীন সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছিনিয়ে এনেছে বাংলার, বাঙালির সর্বাত্মক বিজয়।
বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হয়ে উন্নয়ন-অগ্রগতির রথে স্পর্শ করতে চলেছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণ। একই সঙ্গে এই মার্চেই আরম্ভ হতে যাচ্ছে মহাকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষের প্রণোদনাময় 'মুজিব বর্ষ'।
বাংলার, বাঙালির স্বাধীনতার মাস মার্চের সূচনালগ্নে বাংলার, বাঙালির সংবাদ সারথি দৈনিক এই দিন পরিবার গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে। স্মরণ করছে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় জাতীয় নেতাদের। জাতির স্বাধীনতার বেদিমূলে জীবন উৎসর্গকারী মহান শহীদদের প্রতি জানাচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা আর স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নিবেদন করছে সশ্রদ্ধ অভিবাদন।