প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:৩৬
‘৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে সৌদিতে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবার’
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর মধ্যস্থতায় দেশটিতে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবার প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রদূতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং মধ্যস্থতায় ২০০৬ সালে দাম্মামে নিহত সাগর পাটোয়ারীর পরিবারকে ৫১ লাখ সৌদি রিয়াল এবং ২০১৯ সালে রিয়াদে নিহত মোছা. আবিরণ বেগমের পরিবারকে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণ বাবদ বিতরণের জন্য পাঠানো হয়েছে।
সৌদির রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি (প্রেস) আসাদুজ্জামান খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী ২০০৬ সালের ২৭ জুন অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দাম্মাম শহরে নিহত হন। দীর্ঘসময় আঁততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট শ্রমকল্যাণ উইং প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারেন সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর পাটোয়ারী হত্যা মামলার সন্দেহভাজন।
স্থানীয় থানা থেকে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এ বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিহত সাগরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অজ্ঞাত বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় তার পরিবারের ফোন নম্বর সংগ্রহের মাধ্যমে দূতাবাসের অনুকূলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশনায় শ্রমকল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি আদালতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন।
বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালত ২০২১ সালের ২৪ মার্চ অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। অভিযুক্তের বাবা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারের আপস প্রস্তাব করলে রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের আপস প্রস্তাবে নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা সম্মত হন। আদালত অভিযুক্তের পরিবারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের চেক (নম্বর-১৯৭৩৪৫৯৭) গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। গত ৬ ডিসেম্বর দাম্মামস্থ সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকের ফয়সলিয়া শাখা মারফত দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়।
অন্যদিকে খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী আবিরণ বেগম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদের আজিজিয়াস্থ নিয়োগকর্তার বাসভবনে গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানি কর্তৃক নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজিজিয়া পুলিশ গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানী, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির এবং তাদের পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেফতার করেন।
দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের তিন সদস্যবিশিষ্ট বিচারক বেঞ্চ প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে কেসাস (জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে করাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে আপিল আদালতের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ কেসাস বা মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হলে নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ক্ষমার সম্মতি দিয়ে রাষ্ট্রদূতের কাছে আবেদন করে। সৌদি আরবে সর্বনিম্ন ক্ষতিপূরণ ৩ লাখ সৌদি রিয়াল হলেও রাষ্ট্রদূতের প্রচেষ্টায় নিহতের পরিবার ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করতে সম্মত হয়। অভিযুক্তের পরিবার আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে কাউন্সেলর (শ্রম) রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাওয়ীলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিচারক চলতি বছরের ১৫ মে প্রধান আসামির হত্যার রায় বাতিল করে আপস অনুযায়ী নিহত মোছা. আবিরণ বেগমের বৈধ ওয়ারিশদের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করেন এবং সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পর তা দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাগর পাটোয়ারী এবং আবিরণ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশির অনুকূলে সর্বোচ্চ ব্লাডমানি আদায় হওয়ায় নিহতের পরিবার সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মরত সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।