প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৫৬
সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ, প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ইসি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে মোট দুই হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরমধ্যে এক হাজার ৯৮৫ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ, এবং ৭৩১ প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। সবচেয়ে বেশি বৈধ প্রার্থী ঢাকায়। আর সবচেয়ে বেশি অবৈধ প্রার্থী কুমিল্লা অঞ্চলে। এছাড়া বৈধ মনোনয়ন সবচেয়ে কম ফরিদপুর অঞ্চলে। যে সব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তারা নির্বাচন কমিশনে আপিল করছেন। শুধু মনোনয়ন বৈধ হওয়া প্রার্থী নয়, যাদের মনোনয়ন টিকছে তারাও ইসিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন যাতে করে প্রতিপক্ষের মনোনয়ন বাতিল হয়।
সম্প্রতি ইসি ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে সোমবার (৪ ডিসেম্বর)। মঙ্গলবার থেকে বাছাইয়ে বাদপড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবেদন শুরু করছেন নির্বাচন কমিশনে। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সামনে অস্থায়ী ক্যাম্পে এ আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। যা চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তারপর ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর আপিল শুনানির মাধ্যমে রায় ঘোষণা করা হবে। প্রার্থিতা হারিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করছেন।
এবারের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আবদুল আলী ব্যাপারী। মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের বারান্দায় গড়াগড়ি করে কান্না করেন। আপিল আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপিল জমা দেওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু আইনজীবীর একটু ভুলের কারণে আজকে জমা দিতে পারলাম না। এটা ঠিক করে পরে জমা দেবো।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে আবদুল আলী বলেন, আমি শুধু নিজের ভোটটা নিজেকে দিতে পারলেই শান্তি। শুধু নিজের ভোটটা দিতে চাই। কারণ অন্যরা আমাকে ভোট দেবে কি না, তা তো আমি জানি না।
এর আগে সোমবার যাচাই-বাছাই শেষে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে ইসি। এরপর নির্বাচন উপলক্ষে আপিল দায়ের, শুনানি ও নিষ্পত্তি সংক্রান্ত নোটিশ জারি করে। এরই মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেতে তৃতীয় দিনে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করেছেন ১৫৫ প্রার্থী। এ নিয়ে মোট আপিলকারী দাঁড়ালো ৩৬৮ জনে। এরমধ্যে ছয়জনের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদনও করা হয়েছে।
দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তিনি এ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। একই আসনে ভোটের লড়াইয়ের অনুমতি পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ। কোনোভাবেই যেন শাম্মী আহমেদ প্রার্থিতা ফিরে না পান সেজন্য ইসিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন তিনি।
অপরদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়নপত্র বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক। জাহিদ ফারুকের পক্ষে তার মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কেবিএস আহমেদ নির্বাচন কমিশনে এই আপিল করেন।
এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, তফসিল ঘোষণার পর এক ধরনের নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে। প্রার্থী ও ভোটারের নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। বিগত কয়েকটি উপনির্বাচনেও ৬০-৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। নানা কারণে স্থানীয় সরকারের ভোটে ভোটার বেশি হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও কিন্তু ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এবারও ভোট বেশি পড়বে। তবে আমাদের সব দল ভোটে এলে ভালো হতো।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয়, এবার ভোটে বেশি লোকের আস্থা আছে। কোনো আসনেই এবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রার্থী নেই। প্রতিটা আসনে গড়ে ৯টা করে প্রার্থী। যাচাই-বাছাইয়ে কিছু প্রার্থী বাদ পড়েছে। তারপরও প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। যতো বেশি প্রার্থী হবে ততো ভোটার আসবে।
যেসব দল নির্বাচনে এসেছে
জাতীয় পার্টি-জেপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি।
ভোট সুষ্ঠু করতে প্রশাসনে বদলি
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে ৩৩৮ থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া ১১০ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বদলি করতেও নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই প্রস্তাবও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে যেসব ওসি বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন প্রথমে তাদের ও পরে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ওসি বদলির নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। সারাদেশে বর্তমানে ৬৫০টির বেশি থানা রয়েছে।
এদিকে রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ৩৩টির ওসিকে বদলি করতে তালিকা তৈরি মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে পাঠায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এদিকে সোমবার প্রথম পর্যায়ে দেশের আট বিভাগের ৪৭ ইউএনওকে বদলির প্রস্তাবে সম্মতি দেয় নির্বাচন কমিশন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৮, বরিশাল বিভাগের ২, খুলনা বিভাগের ৪, ময়মনসিংহ বিভাগের ৬, সিলেট বিভাগের ৬, রাজশাহী বিভাগের ৬ ও রংপুর বিভাগের ২ জন রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, দেশবাসীকে সুষ্ঠু ভোট উপহার দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। সেই ধারাবাহিকতায় ওসি-ইউএনও বদলি করা হচ্ছে। সামনে আরও বদলি করা হবে। শুধু ওসি-ইউএনও নয় অভিযোগ পেলে ডিসি-এসপিদেরও বদলি করা হবে।
ইসিতে ছুটি বাতিল
সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইসিতে কর্মরত সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচনের ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত, সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন অফিস করতে হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলমসহ সবাই শুক্রবারও অফিস করছেন। অধিকাংশ কর্মকর্তা সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অফিস করছেন।