সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০০

২৮ অক্টোবর দিনভর যা ঘটলো ঢাকায়

২৮ অক্টোবর দিনভর যা ঘটলো ঢাকায়
অনলাইন ডেস্ক

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শনিবার রাজধানীতে মহাসমাবেশ পালন করেছে বিএনপি। একই দাবিতে সমাবেশ করেছে সরকারবিরোধী অন্যান্য কয়েকটি দল। এছাড়াও সরকারের পদত্যাগ ও নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর আরামবাগে মহাসমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। তবে জামায়াতের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশি অভিযানে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিএনপির মহাসমাবেশ। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এতে প্রাণহানিসহ ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের কারণে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানী।

এদিন নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রবিবার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। সমাবেশ থেকে এ হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির পর একই দিন সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় জামায়াতে ইসলামী। সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ হরতাল ডাকা হয়েছে।

এদিকে রবিবারের হরতালকে কেন্দ্র করে জননিরাপত্তার স্বার্থে রাতেই রাজধানীতে ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

দিনভর রণক্ষেত্র রাজধানী

শনিবার নির্ধারিত সময়ের সোয়া এক ঘণ্টা আগেই দুপুর পৌনে ১টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার‍্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ শুরু করে বিএনপি। সমাবেশকে ঘিরে পুলিশ-বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দে সমাবেশের মঞ্চ থেকে চলে যেতে বাধ্য হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কাঁদানে গ্যাসের কারণে সমাবেশস্থলে কারও পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

রাজনৈতিক দলগুলোর এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুরে কাকরাইল মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরে পানির ট্যাংক এলাকায় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে দুপক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলে। পরে পুলিশ সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

এর আগে দুপুর সোয়া ১টার দিকে কাকরাইল মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও হামলা করা হয়। পাশের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে রাখা গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সেই সংঘর্ষ বিজয়নগরেও ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কাকরাইল মসজিদের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি বাস ও দুটি পিকআপে হামলা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা এই হামলা করেছে বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ। হামলাকারীরা বাসটি ভাঙচুর করে। হামলা শুরু হলে বাস ও পিকআপ থেকে নেমে দৌড়ে স্থান ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই সময় তাদের লাঠি হাতে ধাওয়া দেন বিএনপির কর্মীরা। সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সেসময় কাকরাইলে প্রধান বিচারপতি বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সমাবেশগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে করার কথা, ডিএমপি কমিশনারের কাছ থেকে তারা এমন শর্তেই অনুমতি নিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে পুলিশের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রথমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর আমরা তাদের সরিয়ে দেই। পরে তারা আইডিইবি ভবনে আগুন দেয়, চিফ জাস্টিজের ভবনে ভাঙচুর করে। আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি ভবনে আগুন-বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংঘর্ষে পুলিশ নিহত, আহত সংবাদকর্মীরা

রাজধানীর ফকিরাপুলে সংঘর্ষের ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সোয়া ৪টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘নিহত পুলিশ কনস্টেবল আমিনুল ওরফে পারভেজ। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে। তিনি কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। ওই পুলিশ সদস্যের মাথায় কোপানো হয়েছে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘মৃত অবস্থাতেই ওই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। আমরা ইসিজি করার পর নিশ্চিত হয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেছি।’

পুলিশ কনস্টেবল আমিনুল ওরফে পারভেজ নিহতের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘নিহত পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক ছাত্রদল নেতা। তার ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা ঢামেকে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষণেক্ষণে বিএনপি ঢিল মারছিল এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সমাবেশে তারা লাঠি এনেছিল। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমার তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ অনেক ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। একপর‍্যায়ে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আগুন লাগিয়ে দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের ছোটবড় স্থাপনায় আগুন দেয়। এছাড়া কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়। জাজেজ কমপ্লেক্সও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সবাই দেখেছেন- একজন পুলিশ সদস্যকে কীভাবে হত্যা করেছে। পুলিশ সদস্য পড়ে যাওয়ার পরও একজন ছাত্রদল নেতা তাকে কুপিয়ে তার মাথা ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। তার ফুটেজ আমাদের কাছে আছে।’

এদিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে পেশাগত দায়িত্বপালনকালে বিএনপি এবং পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র‍্যাব) সদস্য ও দৈনিক কালবেলার স্টাফ রিপোর্টার রাফসান জানির ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়।

জানা গেছে, শনিবার পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনরত বিএনপি নেতাকর্মীরা রাফসানকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। রাফসানকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

রাফসান ছাড়াও ঢাকা টাইমসের রিপোর্টার সিরাজুম সালেকীন আহত হয়ে পা ভেঙে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে পা প্লাস্টার করা হয়। গ্রিন টিভির বিশেষ প্রতিনিধি রুদ্র সাইফুল্লাহ ও ক্যামেরা পার্সন আরজু ও ঢাকা টাইমসের স্টাফ রিপোর্টার সালেকিন তারিনসহ আরও বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত ও আহত হয়েছেন।

পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ৪১ পুলিশ

রাজধানীর নয়াপল্টন, কাকরাইল ও নাইটেঙ্গেল মোড়ে দফায় দফায় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ৪১ সদস্য আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করেছেন। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালান। এতে আহত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২২ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন।’

রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগ

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি মাইক্রোবাস ও পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

সংঘর্ষ চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে গাড়িগুলোতে আগুন দেওয়া হয়। এসময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে গিয়ে প্রথমে সড়কে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর করছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে হাসপাতালের ফটকে আগুন নেভায়। এর আগেই পাঁচটি মোটরসাইকেল, একটি বাইসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্সসহ দুটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয়।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে গাড়িতে আগুন দেয়।

হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে র‍্যাব

রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

শনিবার বিকেলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমাবেশকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, মতিঝিল ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও আক্রমণ চালিয়েছে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, যেসব দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা ও আক্রমণ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে র‍্যাব।

র‍্যাবের গোয়েন্দারা গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে জড়িত দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রাস্তাঘাট ফাঁকা, আতঙ্কে দোকানপাটও বন্ধ

ঢাকায় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার কারণে শনিবার সারাদিন রাজধানীর বেশিরভাগ রাস্তা ফাঁকা হয়ে পড়ে। অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়। মাঝেমধ্যে চলে দুয়েকটি বাস, মোটরসাইকেল, রিকশা। লোকজনের চলাচলও চোখে পড়ার মতো ছিল না। আতঙ্কে অল্পকিছু খাবারের দোকান ছাড়া বাকি দোকানপাটও বন্ধ করে দেয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করে। জরুরি কাজ না ছাড়া সেভাবে বাইরে বের হননি রাজধানীবাসী। এতে রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা পড়ে ছিল। অন্যান্য দিনে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলের আধিক্য থাকলেও আজ তা ছিল না।

শনির আখড়া, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, ধোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন ও জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে। অনেককে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গুলিস্তান থেকে দূরপাল্লার কোনো বাসও ছাড়েনি।

তবে সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন দেখা গেছে। কিছু কিছু সড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতেও দেখা গেছে।

এদিন পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যদের রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট বসানো হয়। সমাবেশ চলাকালে সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতে রাজধানীতে পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়।

রবিবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। হরতালে জনসাধারণের নিরাপত্তায় শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাতেই রাজধানীতে ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, রমনায় এক, মতিঝিল দুই ও পল্টনে দুই প্লাটুন বিজিবি টহলে থাকবে। এছাড়া সচিবালয়ে দুই ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

রাজধানীর শাজাহানপুরে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার শাহাজাদী সুলতানা।

তিনি বলেন, খিলগাঁওয়ে বাসে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছিল ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট। পরে ফায়ারের সার্ভিসের গাড়িতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় ফায়ার ফাইটারদের মারধর করে গাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটিও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আরেকটি ইউনিট গিয়ে আগুন নির্বাপণ করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রবিবার বিএনপির ডাকা হরতালেও বাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ডাকা রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ব্যাপারে সমিতির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকাস্থ পরিবহন কোম্পানি, রুট মালিক সমিতি এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক আলোচনা করে সিন্ধান্ত গৃহীত হয়, আগামীকাল হরতালের দিন ঢাকা শহর ও শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে। নেতারা সব রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য সমিতি বা কোম্পানিভুক্ত মালিকদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়