প্রকাশ : ২৫ মে ২০২২, ০৯:৫৫
কোরবানির চামড়ার ভালো ব্যবসার আশা, আছে শঙ্কাও
করোনার মহামারির ধকল কাটিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রা। এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে চামড়ার দাম। ফলে আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়ার ‘ভালো ব্যবসা’ হবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট ও কেমিক্যালের দাম বাড়ায় চামড়া শিল্পের বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এসব চামড়ার বড় অংশই আসে কোরবানির ঈদ ঘিরে।
তাদের ভাষ্য, করোনার কারণে টানা দুই বছর (২০২০ ও ২০২১ সালে) চামড়ার ব্যবসা খুব একটা ভালো যায়নি। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী এ দুই বছরের কোরবানির পশুর চামড়া কিনে লোকসানে পড়েছেন। এমনকি কেউ কেউ চামড়া বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলেও রেখে গেছেন। তবে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এরইমধ্যে চামড়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বেড়েছে। ফলে এ বছর কোরবানির ঈদে চামড়ার ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত) দুই মাস বাকি থাকতেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের আয় ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১০১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয় ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে দেশে চামড়ার দাম সবচেয়ে কম ছিল ২০২০ সালে। ওই বছর কোরবানির ঈদের সময় সরকার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরের জন্য নির্ধারণ করা হয় ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ১০ থেকে ১২ টাকা।
গত বছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কিছুটা বাড়িয়ে ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা করা হয়। এছাড়া সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং আর ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
অবশ্য এ দাম ২০২০ সালের আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশ কম। ২০১৪ সালে গরু বা মহিষের প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৭৫-৮০ টাকা, ২০১৫ সালে ৫০ টাকা, ২০১৬ সালে ৫০-৫৫ টাকা, ২০১৭ সালে ৫০-৫৫ টাকা, ২০১৮ সালে ৪৫-৫০ টাকা এবং ২০১৯ সালে ৪৫-৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
দাম কমানো হলেও গত দুই বছরে কোরবানির ঈদের সময় কাঁচা চামড়া কিনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দাম না পেয়ে কাঁচা চামড়া রাস্তায় ফেলে রাখার ঘটনাও দেখা গেছে।
করোনা মহামারিতে গত দুই বছরের ব্যবসা পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক আমাদের ব্যবসা খারাপ গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও ছিল মন্দা। সবকিছু মিলে টানা দুটি বছর আমরা খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম। যার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে হয়তো কয়েক বছর লেগে যাবে।
এবার কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা কেমন হতে পারে, জানতে চাইলে কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে ব্যবসায় মন্দা ভাব কাটানোর চেষ্টা করছি আমরা। গতবারের তুলনায় এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি আছে এবং দেশের বাজারেও চামড়ার দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত বছর সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছিল বর্তমানে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম তারচেয়েও ৩-৪ টাকা বেশি। এ কারণে আমরা আশাবাদী, এবার চামড়ার ব্যবসা ভালো হবে এবং কোরবানিও গতবারের তুলনায় বেশি হবে।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ব্যবসা ভালো হয়েছে। আপনারাই দেখেছেন, ২০২০ সালে দেশের অনেক অঞ্চলে চামড়া নষ্ট হয়েছে। তবে গত বছর চামড়া সেভাবে নষ্ট হয়নি। আশাকরি, এবার ব্যবসা আরও ভালো হবে। আমরা আসন্ন কোরবানি ঈদ ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়ার দাম এখনো সেভাবে বাড়েনি। যে ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে তা-ও কেমিক্যালের দাম বাড়ার কারণে। যে কারণে দেখা যাচ্ছে, আগে যে চামড়া ১ ডলারে বিক্রি হতো, এখন তা ১ দশমিক ২০ বা ১ দশমিক ২৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কেমিক্যালের দাম অত্যাধিক বেড়ে গেছে, এখন আরও বাড়ছে।
তিনি বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়ার ব্যবসা কেমন হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। হয়তো মাসখানেক পরে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের চামড়ার মূল ক্রেতা চীন। তবে দেশটি এখনও অর্ডার স্থগিত রেখেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মূল্যস্ফীতির কারণে সেরকমভাবে অর্ডার দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে বলা যাচ্ছে না সামনের দিনগুলো কোনদিকে যাবে।
বিটিএ সভাপতির মতে, গত বছর প্রতি বস্তা লবণের দাম ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে সাড়ে ৯০০ টাকা হয়েছে। লবণ মজুত করে একটা অসাধু শ্রেণি বাড়তি মুনাফা ভোগের চেষ্টা করছে।
সূত্র: জাগো নিউজ