প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:২৪
দুর্নীতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে: পরিকল্পনামন্ত্রী
দেশে অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বিল–২০২৩ পাসের আলোচনায় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরাম ও জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন।
দুর্নীতির বিষয়ে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একটি বিষয়ে তারা (আলোচনায় অংশ নেওয়া সংসদ সদস্যরা) সবাই একমত, আমিও তাদের সঙ্গে একমত। সারাদেশের সর্বত্র, অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা পূর্বের তুলনায় আনুপাতিক হারে বেড়েছে। যে পরিমাণ পাবলিক মানি ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে ব্যয় হতো, তার তুলনায় ২-৩-৪ গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে সুযোগ-সুবিধা... চুরির সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। এটি জাতীয় সমস্যা। আইন-কানুন পাস করে, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনমত তৈরি করে, জনগণের কাছে স্বচ্ছতা তুলে ধরে প্রচার করি। যা নিয়ে যায়, এর পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসবে।
তিনি বলেন, হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প আমার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাস হয়ে যায়। এগুলোর জন্য একসময় ক্রয়ে যেতে হয়। অতীতের যে সিপিটিইউ ছিল সেটি বর্তমান সময়ে ভলিউমের সঙ্গে সক্ষমতা দেখাতে পারছে না। তাদের জনবল, যন্ত্রপাতির অভাব, অনেক ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার অভাব। সেই সমস্যার সমাধানে বিলটি আনা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, কোনো টেন্ডার আমি মন্ত্রী বা সিপিটিইউ ডিজি পাস করতে পারেন না। কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা বাছাই করে ফাইনালে যায়। এরপরও যদি সংশয় থাকে, সেই ভূতে ভয় না পেয়ে আমাদের একটানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
এর আগে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এখন টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের কোনো লাভ হয়নি। এক শ্রেণির আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ বর্তমান টেন্ডার ব্যবস্থাকে নিরাপদ মনে করে এবং এর আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। এর ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে, পর্দা কেনা, বালিশ কেনা...।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এ আইনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল টেন্ডারবাজি বন্ধ করা। এতে কিছু ভালো হয়েছে। কিছু খারাপ দিকও হয়েছে। আগে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ দুর্নীতি হতো। এখন ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ কাজ হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ দুর্নীতি হয়।
মন্ত্রণালয়ের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আটকে দেওয়ার ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, মেগা প্রকল্প উনার (পরিকল্পনামন্ত্রী) কাছ থেকে যায়। তখন তিনি যদি আটকাতে পারতেন তাহলে দেশের অর্থনীতি, আমাদের কাছে অনেক টাকা থাকতো। অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আসছে। কিন্তু তা থেকে রিটার্ন আসছে না। এটি বোঝার মতো সক্ষমতা নেই, এটা আমি বিশ্বাস করি না। অবশ্যই আছে।
‘ক্ষমতার অতিমাত্রায় এককেন্দ্রীকরণের একজন জ্ঞানী মন্ত্রীও যদি আটকাতে চান তাহলে সেই ক্ষমতা তার কাছে নেই। কারণ সাপোর্টিং ইনস্টিটিউশন নেই। সেটি করতে হবে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। ব্যাংক ঝুঁকির মুখে। ডলার খোলাবাজারে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে এটি এখানে বলবো না, বাজারে প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। কালকে আমার এক রোগীর জন্য কিনেছি।’
সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাদারত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
রবিবার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিলটি পাসের জন্য জাতীয় সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি পাস হয়।
বিলে বলা হয়েছে, এ আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) বিলুপ্ত হবে। বিপিপিএ’র ১৭ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। তবে সরকার চাইলে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারবে। পরিকল্পনামন্ত্রী হবেন এ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। আর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কাউকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে সরকার। এ কর্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকবে। বিপিপিএ তার কাজ সম্পাদনের জন্য যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।