নারীদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়তে প্রধানমন্ত্রীর ৫ দফা

নারীদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দিয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “গ্লোবাল সাউথে, আমাদের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এসডিজি ৫ অর্জনের জন্য আমাদের সকলের হাতে হাত রেখে চলা উচিত।”

বাসস জানায়, পঞ্চদশ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে এ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা।

কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পাঁচটি বিষয়ের প্রতি গ্লোবাল সাউথ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, “আমাদের নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান খাদ্য, শক্তি ও আর্থিক সংকটের বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে হবে।”

দ্বিতীয়ত, তিনি মেয়েদের স্কুলে রাখতে, তাদের সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন কমানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অনেক মেয়েই এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

শেখ হাসিনার তৃতীয় প্রস্তাবে নারীদের লাভজনক কর্মসংস্থান, শালীন কাজ, মজুরি সমতা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়।

চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী নারীদের একটি সক্রিয় ও টেকসই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরির পাশাপাশি জলবায়ুর প্রভাবের কারণে নারীদের সুরক্ষা ও টিকে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীতার ওপর গভীরভাবে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “আমি লিঙ্গ সমতা নিয়ে আপনাদের প্রতিশ্রুতিতে সত্যিই অনুপ্রাণিত বোধ করছি।”

শেখ হাসিনা তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতি রামাপোসার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং নারী মাস উদযাপনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানান।

নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রণীত সংবিধানে নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

“আমাদের সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘রাষ্ট্র ও জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকবে’।”

তিনি বলেন, “আমাদের জাতীয় সংসদে একটি অনন্য নজির রয়েছে, যেখানে আমাদের স্পিকার, সংসদের নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদের উপনেতা সকলেই নারী।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার নারীদের জন্য সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চ পদ, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও আরও অনেক কিছুর দরজা খুলে দিয়েছে।

জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার সংস্থায় নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হওয়ায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নারী রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন বলেও তিনি বক্তৃতায় জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান দুটি মূল উপাদান-যা নারী ক্ষমতায়ন করতে পারে। তাই, নারী শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে।

“প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের তালিকাভুক্তি বেড়েছে ৯৯ শতাংশ। মেয়ে-ছেলে স্কুলে তালিকাভুক্তির অনুপাত ৫৩:৪৭ এ উন্নীত হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ২৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন উপবৃত্তি এবং বৃত্তি কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। উপবৃত্তির অর্থ সরাসরি তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মা অথবা বৈধ অভিভাবকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে এবং নারী শিক্ষার হার বাড়ায় বাল্যবিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষায় এখন শিক্ষক পদের ৬০ শতাংশ নারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “নারীরা আমাদের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের মেরুদণ্ড। ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন নারী সরাসরি এই খাতে কাজ করে। নারীরা ব্যবসায়ও ভালো করছে।

“আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তা নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ, ঋণ ও তাদের পণ্য বাজারে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের গ্রামীণ নারীদের অনেকেই এখন আইটি ফ্রিল্যান্সার বা স্থানীয় ডিজিটাল সেন্টারে অংশীদার হিসেবে কাজ করেন।”

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উদ্যোগে প্রতিবন্ধীসহ সবচেয়ে দুর্বল নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

“আমি আমার বিনামূল্যে আবাসন প্রকল্প- আশ্রয়ণের অধীনে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানার ব্যবস্থা করেছি।”

প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহুও অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।