প্রকাশ : ২৩ মে ২০২২, ১০:৩৯
‘কম ক্ষতিগ্রস্ত মুদ্রার তালিকায় বিশ্বে ২য় স্থানে বাংলাদেশের টাকা’
কোভিড পরিস্থিতি শেষ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েকটি তেল রপ্তানিকারী দেশ ছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মূল্যমান ব্যাপকভাবে কমেছে। সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রার মূল্যমান কম হ্রাস পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে এশিয়াসহ গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে আর বিশ্বের সব উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে। আর একই সময়ে কয়েকটি তেল রপ্তানিকারী দেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান বেড়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি পরিচালিত এক গবেষণা থেকে এই তথ্য উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। সম্প্রতি ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে দলের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সভায় তিনি এই গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, পৃথিবীর সবদেশেই ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মূল্যমান কমেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের মুদ্রারও মূল্যমানও কিছুটা কমেছে। তবে, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশি মুদ্রার মূল্যমান কমেছে কম। নিজস্ব মুদ্রার মূল্যমান কম হ্রাস পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে গোটা বিশ্বে কম্বোডিয়া প্রথম আর বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে।
গবেষণায় দেখানো হয়, বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান কমেছে ৩.৪১ শতাংশ, ভারতীয় রুপির কমেছে ৬.৮৩ শতাংশ, পাকিস্তানি রুপির ৩০.৬৩ শতাংশ, নেপালি রুপির ৬.৪৮ শতাংশ, মায়ানমার কিয়াটের ১২.৬৭ শতাংশ, চীনা উয়েনের ৫.৪ শতাংশ, থাই বাথের ৯.৬৬ শতাংশ, জাপানি ইয়েনের ১৭.৩২ শতাংশ, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ানের ১২.০৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের ৩.৯ শতাংশ, ফিলিপিনো পেসোর ৯ শতাংশ, তাইওয়ান ডলারের ৬.৪ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ডলারের ৩.৭৫ শতাংশ, কম্বোডিয়ান রিয়েলের ০শতাংশ, ব্রুনাই ডলারের ৩.৬০ শতাংশ, লাও কিপ এর (লাওস) ৪১ শতাংশ, টার্কিশ লিরার ৮৯.৩৭ শতাংশ, মিসরীয় পাউন্ডের ১৪.৫ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকান রেন্ড এর ১৩.৬৬ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ান ডলারের ৯.১৭ শতাংশ, নিউজিল্যান্ড ডলারের ১০.৭৭ শতাংশ, ব্রিটিশ পাউন্ডের ১১.৮৬ শতাংশ, ইউরোর ১৩.৪০ শতাংশ, সুইস ফ্রাঙ্কের ৮.৫৫ শতাংশ, সুইডিশ ক্রোনারের ১৯.৬৭ শতাংশ, নরওয়েজিয়ান ক্রোনের ১৬.৫৪ শতাংশ, ডেনিশ ক্রোনের ১৫.৩৯ শতাংশ, পোলিশ জ্লোটির ১৮.৭৪ শতাংশ, কানাডিয়ান ডলারের ৬.৩২ শতাংশ, আর্জেন্টাইন পেসোর ১১.৫ শতাংশ, চিলিয়ান পেসোর কমেছে ১৫.৪৪ শতাংশ।
গবেষণায় দেখানো হয়, যেসব কারেন্সির বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান বেড়েছে, সেগুলোর মধ্যে জাপানি ইয়েনের বিপরীতে বেড়েছে ১৩.৮৬ শতাংশ, ইউরোর বিপরীতে ১০.৯৪ শতাংশ পেয়েছে, ভারতীয় রুপির বিপরীতে ২.৭৩ শতাংশ, ব্রিটিশ পাউন্ডের বিপরীতে ৮.০৭ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বিপরীতে ৬.৪৫ শতাংশ, চীনা উয়েনের বিপরীতে ১.৩২ শতাংশ, কানাডিয়ান ডলারের বিপরীতে ২.৯৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ানের বিপরীতে ৯.৩৮ শতাংশ, ডেনিশ ক্রোনের বিপরীতে ১১.৯৭ শতাংশ, আর্জেন্টাইন পেসোর বিপরীতে ২১.৬৯ শতাংশ, সুইস ফ্রাঙ্কের বিপরীতে ৪.৯২ শতাংশ, নিউজিল্যান্ড ডলারের বিপরীতে ৭.৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষণায় দেখানো হয় ডলারের বিপরীতে মূল্যমান বেড়েছে মাত্র দুইটি দেশের মুদ্রার। ডলারের বিপরীতে রাশিয়ান রুবলের মূল্যমান বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯.০৫ শতাংশ আর ব্রাজিলিয়ান রিয়েলের বৃদ্ধি পেয়েছে ৮.৯৭ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব একটা গভীর অর্থনৈতিক সংকট ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে বিএনপি এবং তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে নানা গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে দেশের বড়ো ক্ষতি করতে চায়। তারা দেশবিরোধী অপশক্তি। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের তথা আমাদের জাতীয় স্বার্থে এদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের এই আকাশচুম্বী সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশবিরোধী শক্তি এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। এরা বাংলাদেশের ধ্বংস চায়। এদের প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্যরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে অতন্ত্র প্রহরীর মতো কাজ করবে এবং এই অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ প্রতিটি ডিজিটাল প্লাটফর্মে সক্রিয় থেকে এই অশুভ শক্তির নানা মিথ্যাচার ও অপপ্রচার প্রতিহত করবে।
সভায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে নানা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তথ্য উপস্থাপন করেন তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সকল টেলিভিশন চ্যানেল এই স্যাটেলাইটের সেবা গ্রহণ করার ফলে রাষ্ট্র বিপূল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবহার না করলে এই অর্থ বিদেশি কোন কোম্পানিকে দিতে হতো। তাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোন মুনাফা অর্জন করছে না- এটি একটি জঘন্য মিথ্যাচার এবং অপপ্রচার।
তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান বলেন, কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ, ভৌত কাঠামো খাত সহ রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসীম দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার হউক না কেন, বাংলাদেশকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার নিজস্ব মহিমায় এগিয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য এবং তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেয়া যাবে না। এটিই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা।
জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং উপকমিটির সদস্য প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশ আজ প্রকৃত অর্থে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের আর পেছনে ফেরার কোন কারণ নেই। বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি বাংলাদেশের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশ বিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাই এই সাফল্যের একমাত্র দাবিদার।
সভায় তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য ডা. জাহানারা আরজু, এম এনামুল হক আবীর, আমেনা কোহিনুর, আবুল ফজল রাজু, সৈয়দ আবু তোহা, ব্যারিস্টার সৌমিত্র সর্দার, অ্যাড. জামাল মিয়া, ড. শবনম জাহান, রায়হান কবীর, মেজর (অব.) এম এ সায়ীদ খান, রাশিদুল বাসার ডলার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। উপকমিটির সদস্যগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর অসিম সরকার, প্রফেসর শেখ আদনান ফাহাদ, সারোয়ার মামুন চৌধুরী, ড. আরেফা পারভীন তাপসি, মো. রাজীব হোসেন, মো. আলমগীর হোসেন, জামান সিকদার, সোহেল তালহা, অ্যাড. শওকত আলী পাটোয়ারী তুহিন, জামান সিকদার, সফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম সেকান্দর, জয়নাল আবেদীন, আমিনুল ইসলাম, রেজা এনায়েত, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, লিপন মন্ডল প্রমুখ।