প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০১:৩১
শ্যামলীতে পুলিশের গাড়ি ভেঙে আশুলিয়ায় যেভাবে বাসে আগুন
বিএনপি ও তাদের মিত্রদের ২৯ জুলাই শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির দিন আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় যানবাহন ভাংচুর ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কয়েকজন বিএনপি নেতা সরাসরি জড়িত। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্রে ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেয়া তথ্যে পুলিশের কাছে পুরো ঘটনা পরিস্কার হয়েছে। ঢাকার শ্যামলীতে গাড়ি ভেঙে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া খেয়ে ঢাকা জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা নিরিবিলি এলাকায় গিয়ে এ ঘটনা ঘটান।
পুলিশ জানায়, আশুলিয়ার নিরিবিলিতে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির ছয় নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার বিএনপির তিন নেতাকে আটক করা হয়। পরে সোমবার রাতে খুলনা, রংপুর, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে দলটির আরো তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মুনিনুল কাউন্দিয়াা বিএনপির পদধারী হলেও ঢাকার দারুস সালাম থানা এলকায় যুবদলের রাজনীতি করেন। দলের অন্তর্কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষ ডা. সালাউদ্দিন বাবু যাতে বাস পুড়ানো মামলার আসামি হন সেজন্য কৌশল হিসেবে তারা নিরিবিলি এলাকা বেছে নেয় বলে ধৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান মঙ্গলবার দুপুরে তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, পরিবহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের আগ মূহুর্তের ফুটেজ ও সিসিটিভি পর্যালোচনা করেই আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ঢাকা জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সুরুজ্জামান, ধামরাই পৌর ছাত্রদলের সদস্য অপূর্ব চন্দ্র দাস, ঢাকা জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সাভার থানা যুবদলের সদস্য সুজন, ঢাকা জেলা বিএনপির সদস্য মুমিনুল ইসলাম ও ধামরাই থানা যুবদলের সদস্য রাজীব হোসেন। তিনি বলেন, গত ২৯ জুলাই বিএনপির সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিকেলে বিএনপির কিছু নাশকতাকারী আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় মহাসড়কে বিভিন্ন গাড়ি ভাংচুর করে। ওই সময় ককটেল ফুটিয়ে ও বাসে আগুন জালিয়ে দিয়ে বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি করে তারা। এ ঘটনার পরদিন ক্ষতিগ্রস্ত বিকাশ বাসের চালক আনোয়ার হোসেন আশুলিয়ার থানায় মামলা করেন। আশুলিয়া থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল অভিযানে নামে। পুলিশ সুপার আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
যেভাবে ঘটে ঘটনা : পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে বলেছে, ২৯ জুলাই শনিবার দুপুরে সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, ঢাকার দারুস সালাম এলাকার বাসিন্দা মুমিনুল ইসলাম ঢাকার শ্যামলীতে রাস্তা অবরোধ করতে সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবুকে মোবাইল ফোনের বিশেষ এ্যাপসে (সিগনালে) কল করেন। ‘আসছি’ বললেও সেখানে যাননি বাবু।
এ অবস্থায় ‘বিশেষ এ্যাপসে’ মুমিনুলের কল পেয়ে একটি পাজেরো গাড়িতে করে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক (বাড়ি নবাবগঞ্জ), ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ (বাড়ি ধামরাই), সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি ও আশফাকের খালাতো ভাই খন্দকার শাহ মাইনুল হোসেন বিল্টু (বাড়ি সাভার), ঢাকা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আইয়ুব খান (বাড়ি আশুলিয়া), ঢাকা জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সুরুজ্জামান (বাড়ি সাভার) ও সাভার থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সেখানে যান।
মুমিনুল কয়েকজন লোক জড়ো করে শ্যামলীতে বিক্ষোভ শুরু করলে আবু আশফাকসহ অন্যরা লাঠি হাতে এর সামনে যোগ দেন। মিছিলের দৃশ্য ফেসবুকে লাইভ করেন আশফাক। এক পর্যায়ে সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদেরকে ধাওয়া দেয়। পুলিশ সেখানে পৌছলে বিক্ষাভকারীরা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাংচুর করে সটকে পড়ে। সেখান থেকে দুপুরের পর ওই পাজেরো জিপে করে আশফাকের নেতৃত্বে উল্লেখিতরা সাভারের রেডিও কলোনী এলাকায় পৌছেন।
সেখানে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তারা অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা করলে স্থানীয় বিএনপির এক নেতা এ খবর জানতে পেরে তাদেরকে ওই এলাকায় ছাড়তে বলেন। এর পর তারা জাতীয় স্মৃতিসৌধের অদূরে নিরিবিলি এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে জেলা যুবদলের সহসভাপতি রকি দেওয়ানকে কল করেন মুরাদ। মোবাইল ফোনে কল করে মুরাদ ধামরাই থেকে আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ১৫-২০ এবং রকি নয়ারহাট এলাকা থেকে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী বিকেল তিনটার দিকে সেখানে ডেকে নেয়। আর আশফাকের নেতৃত্বে ওই নেতৃবৃন্দ রাস্তার একপাশে পাজেরো গাড়িতে অবস্থান নেয়। রাস্তার অন্যপাশে ধামরাই ও নয়ারহাট থেকে আসা ৩০-৩৫ জন মিলে ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ স্লোগান দিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর এবং বিকাশ পরিহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে।
এদিকে আগুন দিয়ে বাস পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বাসের মালিক ও চালক। গাড়ির চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, গলির ভেতর থেকে ৬০ থেকে ৭০ জন পোলাপান স্লোগান দিয়ে বাস ও ট্রাকে ভাংচুর করে। এরপর তারা বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। বিকাশ পরিবহনের এমডি সোহরাব হোসেন বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।