মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ০০:৫১

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন করা উচিত নয় ইইউ’র

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন করা উচিত নয় ইইউ’র
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে সমর্থন না জানাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইইউ-র সাবেক কমিশনার ও ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা বিষয়ক সাবেক বিশেষ দূত ইয়ান ফিজেল। সেনা সমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, বিশ্বের কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রচলন নেই। বাংলাদেশেও সর্বোচ্চ আদালত এ ধরনের ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছেন।

ব্রাসেলসভিত্তিক ইইউঅবজারভারডটকম নামের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ১১ জুলাই (মঙ্গলবার) প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইইউ-কে ওই পরামর্শ দেন ইয়ান ফিজেল।

নিবন্ধে স্লোভাকিয়ার সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও দেশটির রাজনৈতিক দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের নেতা ইয়ান ফিজেল লিখেছেন, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন সামনে রেখে মূল বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে তা বর্জনের হুমকিও দিয়েছে তারা। এদিকে টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, তিনি কিছুতেই অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছাড়বেন না।

ইয়ান ফিজেল আরও লিখেছেন, এর আগে বাংলাদেশের সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি ছিল সেনা সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা নির্বাচন স্থগিত রেখে টানা দুই বছর শাসনক্ষমতায় ছিল। সে সময় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উদাহরণ টেনে ইইউ-র সাবেক এই কমিশনার লিখেছেন, বাংলাদেশে সে সময়ের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আচরণ ছিল অনেকটা জান্তা সরকারের মতোই। তারা জনপ্রিয় রাজনীতিকদের এমনভাবে রাজনীতির মাঠ থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিল, যেন তাঁরা আর নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন।

ইয়ান ফিজেল লিখেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমান নির্বাচনে লড়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন ২০০৬-২০০৮ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের করা মামলায় দণ্ডিত হয়েই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও সে সময় কারাবন্দী করা হয়েছিল। সম্ভবত এ কারণেই বিরোধীদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোর উদাহরণ টেনে ইয়ান ফিজেল লিখেছেন, গত জুনে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও তা শান্তিপূর্ণ হয়েছে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র এক প্রার্থী।

বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সমর্থন না দিতে ইইউর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংস্থাটির সাবেক এই কমিশনার লিখেছেন, বিশ্বের কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রচলন নেই। ২০১১ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। এর আগে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে পাস হওয়া নতুন এক আইনের সুবাদে নির্বাচন কমিশন এখন স্বাধীনভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। তার ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়